মহিষ পালন
ভূমিকা
দক্ষিণ এশিয়ার অন্যান্য দেশের মত আমাদের দেশের সাধারণ মানুষের কৃষি ও আর্থ সামাজিক উন্নয়নে সার্বিক অবদানের গুরুত্ব বিবেচনায় মোটামুটি ৫০০ খ্রীষ্টাব্দ থেকেই গরুর পরেই মহিষের স্থান । সাধারণভাবে বর্তমানে মহিষকে এশিয়ার প্রাণী বলা হয়। মহিষ দেখতে কালো, ধুসর অথবা বাদামী রঙের দেখা যায়। কৃষি কাজে কর্ষণের শক্তি হিসেবে, কাছাকাছি দূরত্বে পণ্য পরিবহণের কাজে এবং মানুষের নিকটবর্তী পথ চলাচলে গাড়ি টানার জন্য, অর্থ সাশ্রয়ী ও পরিবেশ দূষণমুক্ত শক্তির প্রযোজনে, খাদ্য বস্তু হিসেবে তুলনামূলকভাবে অধিক ননী-সমৃদ্ধ দুধ আর মোটা আঁশযুক্ত মাংসের উৎস হিসেবে, জমির উর্বরতা শক্তি বৃদ্ধির জন্য জৈব সার হিসেবে হাড় ও গোবরের ব্যবহার, মানুষের ব্যবহার্য সৌখিন সামগ্রী তৈরীর জন্য শিং, হাড় ও চামড়ার ব্যবহারের জন্য মহিষ পালনের গুরুত্ব উপলব্ধি করা যায়। ভারত উপমহাদেশের মহিষ দুধ উৎপাদনের ক্ষেত্রে বিশেষভাবে পরিচিত। এজন্য দক্ষিণ এশিয়া তথা ভারতের মহিষকে দুধ উৎপাদনের মেশিন বলা হয়। গরু পালনের তুলনায় মহিষ পালন তুলনামূলকভাবে সহজ আর কম ব্যয় বহুল। গরু পালনের খরচের তুলনায় মহিষ পালনের ক্ষেত্রে বাসস্থান এবং খাদ্য খরচ অনেকটা কম কারণ মহিষ বালুচর আর নদী বিধৌত বাথান এলাকায় সবুজ ঘাস খেয়ে থাকে। গরুর তুলনায় মহিষের রোগবালাইও অপেক্ষাকৃত কম। মহিষ গরম সহ্য করতে পারেনা এ কারণে কাদামাটি ও পানিতে গড়াগড়ি করতে পছন্দ করে। আরামের জন্য পানি আর ছায়াযুক্ত জায়গায় থাকতে আরাম বোধ করে। দিনের মধ্যভাগে এবং সূর্যাস্তের কিছুটা আগে মহিষকে বেশ কয়েক ঘন্টা কাদাপানিতে গড়াগড়ি করে অবস্থান করতে দিতে হয়। মহিষ গড়ে ১৫ বছর বাঁচে এবং সমগ্র জীবণচক্রে প্রায় ১৬-১৭টি বাচ্চা প্রদান করে থাকে। উল্লেখিত এসব তথ্যাদি সাধারণ মহিষ পালনকারীদের জানা থাকলেও আধুনিক প্রযুক্তি-ভিত্তিক পালন পদ্ধতিতে মহিষ পালনের জন্য বিস্তারিত তথ্য জেনে রাখা ভাল । তাই আমাদের সেবাদান কেন্দ্র থেকে মহিষ পালনের পদ্ধতিগত প্রযুক্তির উপর ধারণা দেয়ার প্রয়াসে কিছু প্রশ্নোত্তর পর্বের উপস্থাপন করা হলো:
সংশ্লিষ্ট তথ্য
১. পৃথিবীর কোন কোন দেশে মহিষ পালিত হয়?
• গ্রীষ্মপ্রধান এবং অ-গ্রীষ্মপ্রধান দেশসমূহে মহিষ পালিত হয়।
২ মহিষ পালনে পৃথিবীর কোন দেশ শীর্ষ-স্থানীয়?
• চীন।
৩. বর্তমানে পালিত মহিষের বংশধর কোন জাতের?
• এশিয়ার বন্য-প্রজাতির মহিষ।
৪. কোন কোন প্রয়োজনে মহিষ পালিত হয়?
• কৃষি কাজ, পরিবহন, দুধ ও মাংস উৎপাদনের জন্য মহিষ পালিত হয়।
৫. এশিয়া মহাদেশে উৎপাদিত মহিষের দুধের পরিমাণ কী রকম?
• এ অঞ্চলের মহিষ প্রায় ৩৭% দুধ উৎপাদন করে।
৬. বাংলাদেশে মহিষ থেকে কি পরিমাণ মাংস উৎপাদিত হয়?
• পাঁচ হাজার টনের বেশি মাংস উৎপাদিত হয়।
৭. মহিষকে জীবন্ত ট্রাক বলা হয় কেন?
• কৃষি কাজ ও ভার বহনের বিশেষ উপযোগী বিধায় মহিষকে জীবন্ত ট্রাক বলা হয়।
৮. মহিষকে দামী ব্লাক পাথর বলা হয় কেন?
• মহিষ অপেক্ষাকৃত অধিক উপকারী বিধায় থাইল্যান্ডে মহিষকে দামী ব্লাক পাথর বলা হয়।
৯. মহিষ কোন অঞ্চলে বিচরণ করতে ভালবাসে?
• সামান্য লোনাপানির অঞ্চলে মহিষ বিচরণ করতে ভালবাসে।
১০. উপকূলীয় অঞ্চলে কিভাবে মহিষ পালন করা হয়?
• সুনির্দিষ্ট স্থান ও দুপুর বেলায় মালিক কেবল খামারের মিঠাপানি, সামান্য দানাদার খাদ্য, ভূষি, খৈল ইত্যাদি খাদ্যসামগ্রী সরবরাহ করে মহিষ পালন করেন।
১১. মালিক কখন মহিষের দুগ্ধ দোহন করেন?
• আধাবনে দলবেধে মহিষ যখন খাবারের লোভে বিচরণ করতে আসে মালিক তখন নৌকাযোগে ঘাটে আসেন এবং দুগ্ধ দোহন করেন।
১২. কোন এলাকায় এ ধরণের মহিষ পালন ও দোহন করা হয়?
• ভারতের অন্ধ্র প্রদেশের কাকিনগর ও গোদাভরী নদীর মোহনার বনাঞ্চলে আধাবনে মহিষ পালন করা হয়।
১৩. বাংলাদেশের কোন এলাকায় অধিক সংখ্যক মহিষ পালিত হয়?
• খুলনা ও বাগেরহাটে সরকারী তত্ত্বাবধানে খামারে মহিষ পালিত হয়। এ ছাড়াও সমতল ভূমিতে বিগত ২০ বছরে গরুর তুলনায় মহিষের সংখ্যা প্রায় দ্বিগুণ বেড়েছে।
১৪. মহিষ পালনে সাধারণ সুবিধাগুলি কি?
• গরুর তুলনায় রোগ-প্রতিরোধ ক্ষমতা বেশি এবং প্রতিকূল আবহাওয়ায় মহিষ অতি সহজে বাঁচতে পারে।
১৫. মহিষ পালনে বাড়তি সুবিধাসমূহ কি?
• গরুর তুলনায় আকারে বড় হওয়ায় মহিষ বেশি পরিমাণে মাংস ও গোবর এবং বিশেষ ধরণের মোটা চামড়া উৎপাদন করতে পারে।
১৬. মহিষ কি ধরণের খাবার সহজে খেতে পারে?
• গরুর তুলনায় মহিষ বেশি আঁশ-জাতীয় খাদ্য সহজে হজম করতে পারে। তাই আঁশ-জাতীয় নিম্ন মানের খাবার সরবরাহ করে গরম মৌসুমে মহিষ পালন করা যায়। এ কারণে বেশি মোটা খড় মহিষকে খাওয়ানো যেতে পারে।
১৭. গরুর দুধের তুলনায় মহিষের দুধ উৎকৃষ্ট কেন?
• গরুর দুধের তুলনায় মহিষের দুধে প্রায় দ্বিগুণ চর্বি থাকে।
১৮. মহিষের বাসস্থানের খরচ কেমন এবং মহিষ ব্যবহারের সুবিধা কি কি?
• অপেক্ষাকৃত অল্প খরচে বাসস্থান তৈরি করা যায় এবং কাদা অবস্থায় অনেক বেশি জমি চাষ করা যায়।
১৯. কাজ করানোর জন্য মহিষ কত বছর রাখা যেতে পারে?
• কাজ করানোর জন্য প্রায় ২০ বছর মহিষ ব্যবহার করা যেতে পারে।
২০. মহিষের দুধের অন্যান্য গুণাগুণ কি?
• মহিষের দুধে কঠিন পদার্থ ও চর্বি বেশি থাকে এবং গরুর তুলনায় দুধ ও মাংসে কলেস্টেরল কম থাকে।
২১. মহিষের দুধে কি কি দুগ্ধজাত খাদ্যপণ্য তৈরি করা হয়?
• মহিষের দুধ অনেক প্রকার মিষ্টি খাদ্যপণ্য তৈরির উপযোগী।
২২. মহিষকে কোন ঋতুতে প্রজনন করানো হয়?
• সুনির্দিষ্ট কোন প্রজনন ঋতু নেই তবে শীতকালে সাধারণত প্রজননের আধিক্য দেখা যায়।
২৩. মহিষকে সাধারণত কত ভাগে ভাগ করা যায়?
• দু’ধরণের মহিষ আছে যথা, জলাভূমির মহিষ এবং নদীর মহিষ।
২৪. জলাভূমি এবং নদীর মহিষের মধ্যে কি ধরণের পার্থক্য দেখা যায়?
• জলাভূমি এবং নদীর মহিষের মধ্যে ক্রোমোজম সংখ্যা, দৈহিক গঠন, আকৃতি এবং শিঙের অনেক পার্থক্য পরিলক্ষিত হয়।
২৫. দু’ধরণের মহিষ সাধারণত কোন ধরণের কাজ বা প্রয়োজনে পালন করা হয়?
• দৈহিক বৈচিত্র্যের জল-মহিষ কাজের শক্তি হিসাবে আর নদীর মহিষ প্রধানত দুধ ও মাংসের জন্য পালন করা হয়।
২৬. জল-মহিষের কোন জাত আছে কি?
• জল-মহিষের কোন জাত নেই।
২৭. নদীর মহিষের জাত আছে কি?
• নদীর মহিষের আঠারটি জাত আছে।
৮. নদীর মহিষের জাতগুলো কি?
• নীলি, রাভী, মুরাহ্, সুর্তি, জাফরাবাদি, মেহসানা, কুনদি, ভাদোয়ারি এবং ইতালীর ভূ-মধ্যসাগরীয় মহিষ বিশেষভাবে উল্লেখযোগ্য।
২৯. বাংলাদেশে-প্রাপ্ত মহিষের ধরণ ও জাতের নাম কি কি?
• বাংলাদেশে প্রধানত নদীর মহিষ, জলাভূমির মহিষ এবং শংকর জাতের মহিষ পাওয়া যায়।
৩০. বাংলাদেশে কোন এলাকায় বেশি মহিষ পালিত হয়?
• উপকূল ও হাওর এলাকায় বেশি মহিষ পালিত হয়।
৩১. বাংলাদেশে নদীর মহিষ কোন কোন অঞ্চলে পালিত হয়?
• দেশের মধ্য ভাগ ও পশ্চিমাঞ্চলে নদীর মহিষ পাওয়া যায়।
৩২. নদীর মহিষের উৎপত্তি কোথায়?
• নদীর মহিষের উৎপত্তি ভারতে তবে বর্তমানে বাগেরহাটে পাকিস্থান থেকে আমদানীকৃত নীলী-রাভী জাতের মহিষ বাংলাদেশের সরকারী মহিষ খামারে পাওয়া যায়।
৩৩. দেশীয় জলাভূমির মহিষ কোন অঞ্চলে পাওয়া যায়?
• দেশের পূর্বাঞ্চল এবং উপকূলীয় অঞ্চলে পাওয়া যায়।
৩৪. বাংলাদেশে শংকর জাতের মহিষ কিভাবে সৃষ্টি হয়?
• মুরাহ অথবা নীলি-রাভী জাতের মহিষের শংকরায়ণের ফলে দেশীয় শংকর মহিষ সৃষ্টি হয় যা মূলত উপকূলীয় অঞ্চলে পাওয়া যায়।
৩৫. দেশীয় নদী মহিষের উৎপাদন ক্ষমতা কেমন?
• উৎপাদন ক্ষমতা সবচেয়ে বেশি এবং সুযোগ পেলে এসব মহিষ প্রতি বছর বাচ্চা দিতে পারে।
৩৬. জলাভূমি মহিষের অধিবাস বিস্তৃতি কোথায়?
• মালয়েশিয়া, সিংগাপুর, ফিলিপাইনস, থাইল্যান্ড, ইন্দোনেশিয়া এবং চীন।
৩৭. জলাভূমির মহিষের সাধারণ বৈশিষ্ট্যসমূহ কি?
• দেহের সামনের অংশ হালকা ও পেছনের অংশ মাংসল তাই এদের আকৃতি অনেকটা ব্যারেলের মত দেখায়। এদের শিং দুটি বেশ লম্বা এবং চওড়া।
৩৮. জলাভূমি মহিষের অভ্যাস বা পছন্দ কি কি?
• স্রোতহীন বা স্থির কাঁদাযুক্ত জলামাটিতে গড়াগড়ি দিতে পছন্দ করে।
৩৯. জলা-মহিষের দেহের গঠন কি রকম?
• খর্বাকৃতির বলিষ্ট দেহ, চওড়া মাংসল, ছোট মুখমন্ডল, ছোট ও চিকন পা এবং বুকের বেষ্টনী চওড়া।
৪০. জলাভূমির মহিষের শরীরের রং কেমন দেখায়?
• সাধারণত গাঢ় ধূসর বর্ণের হয় তবে কালো বা সাদা রংয়ের মহিষও দেখা যায়।
৪১. জলাভূমির মহিষের শিং দেখতে কেমন?
• সম্পূর্ণ চওড়া, অর্ধ-গোলাকৃতির বা অর্ধ-চন্দ্রাকৃতির।
৪২. জলাভূমি মহিষের ওলান দেখতে কেমন?
• ছোট আকৃতির এবং পিছনের দুই পায়ের পিছনে অবস্থিত।
৪৩. জলাভূমি মহিষের দৈহিক ওজন কত হতে পারে ও কাঁধের উচ্চতা কত?
• জলাভূমি মহিষের ওজন ৩০০-৬০০ কেজি এবং কাঁধের উচ্চতা ১৩০-১৩৫ সে.মি.।
৪৪. জলাভূমি মহিষের বয়:সন্ধিক্ষণ কখন আসে এবং গর্ভধারণ কাল কতদিন হতে পারে ?
• প্রায় ৩ বছরে বয়:সন্ধিক্ষণ প্রাপ্ত হয় এবং গর্ভধারণ কাল ৩২৫-৩৩০ দিন।
৪৫. জলাভূমি মহিষের ক্রোমোজোম সংখ্যা কত?
• জলাভূমি মহিষের ক্রোমোজোম সংখ্যা ৪৮।
৪৬. নদীর মহিষের অধিবাস বিস্তৃতি কোথায়?
• বাংলাদেশ, ভারত, পাকিস্থান, নেপাল ও শ্রীলংকা।
৪৭. নদীর মহিষের সাধারণ দৈহিক বৈশিষ্ট্য কি রকম?
• সামনে এবং পিছনের অংশ মাংসল, দেখতে ত্রিভুজাকৃতির।
৪৮. নদীর মহিষের পছন্দনীয় কাজ কি?
• স্রোতযুক্ত পানিতে সাঁতার কাঁটতে বেশ পছন্দ করে।
৪৯. নদীর মহিষের দেহের গঠন কি রকম?
• অপেক্ষাকৃত লম্বা ও বড় দেহ তবে বুকের বেষ্টনী ছোট।
৫০. নদীর মহিষের শরীরের রং কেমন?
• সাধারণত কালো রংয়ের হয় তবে মাথা এবং পায়ের মাঝে মাঝে সাদা সাদা ছাপ আছে।
৫১. নদীর মহিষের শিং দেখতে কেমন?
• গোলাকার তবে বিভিন্ন ধরণের বাঁকা ও লম্বা।
৫২. নদীর মহিষের ওলান দেখতে কেমন?
• অনেকটা বড় এবং দুধালো জাতের পশুর মত।
৫৩. নদীর মহিষের দৈহিক ওজন এবং কাঁধের উচ্চতা কতটুকু?
• নদীর মহিষের ওজন ৪৫০-৮০০ কেজি এবং কাঁধের উচ্চতা পুরুষ ও স্ত্রীর ক্ষেত্রে যথাক্রমে ১২০-১৫০ সে.মি. এবং ১১৫-১৩৫ সে.মি.।
৫৪. নদীর মহিষের বয়:সন্ধিক্ষণ ও গর্ভধারণ কাল কতদিন?
• ষাঁড় দুই বছরে পাল দেওয়ার উপযোগী হয় এবং বকনা ৩৫ মাস বয়সে বাচ্চা দেয়।
৫৫. নদীর মহিষের ক্রোমোজোম সংখ্যা কত?
• নদীর মহিষের ক্রোমোজোম সংখ্যা ৫০।
৫৬. জাফরাবাদী মহিষের উৎপত্তি ও বিস্তৃতি কোথায়?
• ভারতের গিরবন এবং জাফরাবাদ শহরের চারপাশে জাফরাবাদী মহিষ বসবাস করে।
৫৭. জাফরাবাদী মহিষের বৈশিষ্ট্যসমূহ কি?
• বৃহদাকৃতির দেহ, কপাল খুবই স্পষ্ট, প্রশস্ত মোটা শিং ঘাড়ের উভয় পাশে উঁচু হয়ে থাকে, ঘাড় মাংসল, গলগম্বল ও ওলান সুগঠিত, শরীর দীর্ঘ ও লম্বাটে এবং গায়ের রং কালো।
৫৮. জাফরাবাদী মহিষের উচ্চতা, দৈর্ঘ্ ও ওজন কি রকম?
• পুরুষ ও স্ত্রী মহিষের উচ্চতা যথাক্রমে ১৪০ এবং ১৩০ সে.মি., দৈর্ঘ্ যথাক্রমে ১৬৭.৫ ও ১৬০ সে.মি. এবং ওজন যথাক্রমে ৫৯০ ও ৪৫০ কেজি।
৫৯. জাফরাবাদী মহিষ কতটুকু দুধ দেয় এবং কি কাজে লাগানো যায়?
• স্ত্রী মহিষ প্রতিদিন ১৫-২০ লিটার দুধ দেয় যাতে চর্বির পরিমাণ অনেক বেশি থাকে; পুরুষ মহিষ চাষাবাদ ও গাড়ি টানার কাজে ব্যবহৃত হয়।
৬০. মুরাহ্ মহিষ অন্য আর কোন নামে পরিচিত?
• দিল্লী মহিষ নামে পরিচিত।
৬১. মুরাহ্ মহিষের নাম মুরাহ্ রাখা হয়েছে কেন?
• শিং কুঞ্চিত (মুরাহ্) ও কুণ্ডলীকৃত বলে মুরাহ্ নামকরণ করা হয়েছে।
৬২. মুরাহ্ মহিষের শরীরের বৈশিষ্ট্য কি?
• শরীর জামকালো বর্ণের, কোন কোন সময় লেজের আগা, কপাল ও পায়ের নিচে সাদা ছাপ থাকে, মোটাসোটা, পেছনের অংশ বেশ চওড়া, দেহের তুলনায় মাথা ছোট তবে কপাল চওড়া; গাভীর গলা লম্বা ও চিকন, চ্যাপ্টা ছোট শিঙের প্রথমাংশ পিছনের দিকে গিয়ে পরে উপরে উঠে পাকিয়ে থাকে।
৬৩. মুরাহ্ মহিষের ওলান দেখতে কি রকম?
• দেখতে সুন্দর, বড় আকৃতির, লম্বা বাঁট, পিছনের বাট লম্বা।
৬৪. মুরাহ্ মহিষের দুধ উৎপাদন কি পরিমাণ হতে পারে?
• প্রথম বাচ্চা প্রসবের পর প্রায় দশ মাসে ১৪০০-২০০০ লিটার (গড়ে প্রতিদিন ২.২-২.৭ লি.) দুধ দেয়, দুধের চর্বি প্রায় ৭% যা ঘি ও মাখন তৈরির জন্য বেশ চাহিদাপূর্ণ।
৬৫. মুরাহ্ মহিষ কি কি কাজে লাগে?
• পুরুষ মহিষ কৃষি কাজের জন্য উপযোগী, মহিষের জাত উন্নয়ণের ক্ষেত্রে কৃত্রিম প্রজননে ষাঁড় ব্যবহৃত হয়।
৬৬. নীলি-রাভী মহিষের উৎপত্তিস্থল ও বিস্তৃতি কোথায়?
• পাকিস্থানের সুতলেজ নদীর তীরস্থ এলাকায় নীলি জাতের মহিষের অবস্থান। নদীর পানির বর্ণ নীল এবং নদীর পাড়ে বিচরণ করে বিধায় নীলি নাম দেয়া হয়েছে। পাকিস্থানের রাভী নদীর অববাহিকায় পাওয়া যায় বিধায় এ মহিষের নাম দেয়া হয়েছে রাভী।
৬৭. নীলি জাতের মহিষের আদি বাসস্থান কোথায়?
• পাকিস্থানের মন্টেগোমারী ও মুলতান এবং পাঞ্জাবের ফিরোজপুর জেলায় নীলি জাতের মহিষের আদি বাসস্থান।
৬৮. নীলি-রাভী জাতের মহিষের প্রধান বৈশিষ্ট্য কি কি?
• মাঝারী দেহের পিছনের অংশ মোটাসোটা, চোখ-কপাল-লেজ সাদা, লেজ বেশ লম্বা, মাথা বড় ও চওড়া, শিং ছোট, শিংয়ের মাঝখানে উপরে ফোলানো, মাথা-মুখের পশম মোটা, গলা লম্বা ও সরু, চওড়া গোলাকৃতি বুক,
বলিষ্ট পা, পিঠ সোজা, গলকম্বল থাকে না, নাভীর ফাঁপা ছোট থাকে, গায়ের রং কালো, কপালে ক্ষুরে সাদা বর্ণ, সারা শরীরে সাদা ছাপ আছে।
৬৯. নীলি-রাভী মহিষের ওজন কত?
• ষাঁড়ের ওজন ৬০০ কেজি এবং গাভীর ওজন ৪৫০ কেজি।
৭০. নীলি-রাভী মহিষ কি পরিমাণ দুধ দেয়?
• প্রথম বাচ্চা প্রসবের পর প্রতিদিন ৯-১৮ লিটার হিসাবে মোট দুধ দানকালে ২৫০দিনে প্রায় ৩৬০০ লিটার দুধ দেয়।
৭১. নীলি-রাভী মহিষ কি কাজে ব্যবহৃত হয় এবং কোথায় পালন উপযোগী?
• নিরীহ ও শান্তশিষ্ট বিধায় ডেইরী খামারে পালন করা যায় এবং কৃষি কাজের জন্য বেশ উপযোগী।
৭২. মেহসানা জাতের মহিষের উৎপত্তিস্থল কোথায়?
• ভারতের গুজরাট রাজ্যের উত্তরে মেহসানা জেলা ও তার পার্শ্ববর্তী এলাকায় এ জাতের মহিষ বসবাস করে।
৭৩. মেহসানা জাতের উৎপত্তি হয়েছিল কিভাবে?
• মুরাহ্ ও সুরতি জাতের মহিষের মাধ্যে সংকরায়ণের মাধ্যমে মেহসানা জাতের মহিষের উৎপত্তি হয়েছিল।
৭৪. মেহসানা জাতের মহিষ দেখতে কেমন?
• মেহসানা জাতের মহিষের দেহের গড়ন মধ্যম, মুখ ও ঘাড় লম্বাটে, হালকা পা, চওড়া কপাল, কালো বর্ণ, মুখ, পা ও লেজের আগায় সাদা ছাপ আছে, উন্নত বাটে সমৃদ্ধ বেশ বড় ওলান, নাকের ছিদ্র বড়, গলকম্বল নেই. কাঁধ বেশ চওড়া এবং কাস্তে আকারের বাঁকা শিং।
৭৫. মেহসানা জাতের মহিষের ওজন কত?
• ষাঁড় প্রায় ৫৪০ কেজি এবং গাভী-মহিষের ওজন ৩৬৫-৪৫৫ কেজি।
৭৬. মেহসানা জাতের মহিষ কত বয়সে বয়:সন্ধিক্ষণ প্রাপ্ত হয় এবং দুধ উৎপাদনের হার কেমন ?
• তুলনামূলকভাবে অতি অল্প বয়সে মেহসানা জাতের মহিষ বাচ্চা দেয়, প্রতিবার বাচ্চা প্রসবের পর দৈনিক ২৬ লিটার হিসাবে প্রায় ২৬৭০ লিটার দুধ দেয় এবং দুধে চর্বির পরিমাণ ৬.৫%।
৭৭. নাগপুরী জাতের মহিষের উৎপত্তিস্থল কোথায় এবং এ জাতের মহিষের অপরাপর নাম কি কি?
• নাগপুর জাতের মহিষ কোথাও কোথাও মারাথওয়াডা এবং বেরারি মহিষ নামে পরিচিত। মধ্য ভারতের নাগপুর অঞ্চলে এ জাতের মহিষের অবস্থান।
৭৮. নাগপুরী জাতের মহিষের বৈশিষ্ট্যসমুহ কি?
• গায়ের রং কালো, মুখ পা ও লেজের আগায় সাদা ছাপ আছে, বক্ষ মোটা, মাথা ও ঘাড় লম্বা, বাট চিকন, শিং তলোয়ারের মতো পিঠে প্রায় ঠেকানো, পেট লম্বা, গাভীর পা হালকা ও লেজ ছোট এবং নাভীর ফ্লাপ থাকে না।
৭৯. নাগপুরী মহিষের ওজন কত কেজি হতে পারে?
• ঘাঁড়ের ওজন প্রায় ৫২৫ কেজি এবং গাভীর ওজন প্রায় ৪২৫ কেজি।
৮০. নাগপুরী মহিষ কি প্রয়োজনে পালন করা হয় এবং কতটুকু দুধ দেয়?
• কাজে কর্মে ধীরস্থির না-হলেও কৃষিকাজে ব্যবহার করা হয় যা ৩০০ দিনে প্রায় ১০০০ লিটার দুধ দেয়, দুধে চর্বির পরিমাণ ৫.৫-৭.0%।
৮১. সুরতি জাতের মহিষের পরিচয় কি?
• সুরতি জাতের মহিষ দেশী বা নাডিয়াডি নামেও পরিচিত। ভারতের গুজরাট রাজ্যের কায়রু ও বড়োদা জেলায় এ জাতের মহিষ পাওয়া যায়।
৮২. সুরতি জাতের মহিষের জাতের বৈশিষ্ট্য কি কি?
• গায়ের রং প্রধানত কালো ও তামাটে হয়, পশমের রং তামাটে ও ধূসর বর্ণের মিশ্রণ, গাভীর গলা চিকন, ষাঁড়ের গলা মোটা ও ভারী, লম্বা চওড়া মাথা,
শিংয়ের মধ্যস্থল বেশ উঁচু ও উত্তলাকৃতির, শিং লম্বা কাস্তের মত চ্যাপ্টা, গলকম্বল-চুঁড়া থাকে না, সোজা চওড়া পিঠ, লেজ সরু লম্বা, লেজের পশম সাদা এবং ওলান বড় ও সুবিন্যস্ত।
৮৩. সুরতি মহিষের দুধ উৎপাদন ক্ষমতা কি পরিমাণ এবং কি জন্য পালন করা হয়?
• সুরতি মহিষ শুধুমাত্র দুধ উৎপাদনের জন্য পালিত হয় যা দৈনিক ৬ লিটার হিসাবে প্রতি বিয়ানে ১৫৫০-১৬০০ লি. দুধ দেয় এবং দুধে চর্বির পরিমাণ প্রায় ৭.৫%।
৮৪. কুন্ডি জাতের মহিষের উৎপত্তি স্থল কোথায় এবং এদের বৈশিষ্ট্যসূমহ কি?
• পাকিস্থানের সিন্ধু এলাকায় পাওয়া যায়। খাটো মুচরানো শিং, গায়ের রং গাঢ় কাল, শক্তিশালী খাটো পা, ওলান ও বাঁটের গঠন উন্নত।
৮৫. কুন্ডি জাতের মহিষ কখন বয়:সন্ধিক্ষণ প্রাপ্ত হয় এবং কি পরিমাণ দুধ দেয়?
• চার-পাঁচ বৎসর বয়সে প্রথম বাচ্চা দেয় এবং প্রায় ১০ বৎসর দুধ দেয়।
৮৬. কুন্ডি মহিষের ওজন কত কেজি এবং কি পরিমাণ দুধ দেয়?
• ওজন প্রায় ৬০০ কেজি, প্রতিদিন প্রায় ১০-১২ লিটার দুধ দেয়, কোন কাজের জন্য তেমন উপযোগী নয়।
৮৭. কুয়াকাম এবং কুয়াইটিউ জাতের মহিষ কোথায় পাওয়া যায়?
• থাইল্যান্ডের উত্তরাঞ্চলে পাওয়া যায়।
৮৮. কুয়াকাম এবং কুয়াইটিউ মহিষের জাতের বৈশিষ্ট্য কি কি?
• অপেক্ষাকৃত ছোট আকৃতির, চামড়া পুরু, রং কাল কিংবা হালকা ধূসর এবং ত্বক কাল, লোম থাকে, দেহ ও মুখ মুন্ডল লম্বা এবং প্রশস্ত ঘাড় পাতলা, স্ত্রী মহিষের গলা পাতলা ও হালকা, কাঁধের উচ্চতা ১৩০-১৪০ সে.মি.।
৮৯. কুয়াকাম এবং কুয়াইটিউ জাতের মহিষের দৈহিক ওজন কত কেজি?
• পুরুষ মহিষ ৩৬০ কেজি এবং স্ত্রী মহিষ ৪৫০ কেজি।
৯০. কুয়াকাম মহিষের পছন্দনীয় বিষয় কি?
• গাছের পাতা খেতে পছন্দ করে এবং কুয়াইটিউ অপেক্ষা গরম সহ্য করতে পারে।
৯১. কুয়াকাম মহিষ কি পরিমাণ দুধ দেয় এবং কি কাজে লাগে?
• খুব কম পরিমাণ দুধ দেয় তবে মূলত কৃষি কাজে এবং মাল বহনের কাজে ব্যবহৃত হয়।
৯২. কুয়াইপারা মহিষের অধিবাস কোথায়, এদের বৈশিষ্ট্য কি এবংএরা কি পরিমাণ দুধ দেয়?
• থাইল্যান্ডের মীসও এবং টাপ অঞ্চলে পাওয়া যায়। ছোট আকৃতির মহিষ, হাড্ডি চিকন, পা ছোট , অপ্রশস্ত কাঁধ, পূর্ণ বয়স্ক অবস্থায় ওজন ৩০০-৩৫০ কেজি, দুধ প্রদানের তথ্য জানা নেই।
৯৩. লাল রঙের মহিষ কোথায় পাওয়া যায়?
• পৃথিবীতে লাল রঙের মহিষ আছে থাইল্যান্ডের দক্ষিণাঞ্চলে যাদের দেহ দীর্ঘ, লাল রঙের ঘন লোম দ্বারা আবৃত এবং দৈহিক ওজন প্রায় ৩৫০ কেজি।
৯৪. এশিয়াতে ম্যারিড নামের কোন মহিষ আছে কি এবং এ জাতীয় মহিষের বৈশিষ্ট্যসমূহ কি?
• মায়ানমারে ম্যারিড নামের মহিষ পাওয়া যায়। এ জাতীয় মহিষের আকার ছোট, গায়ের পশম লম্বা ও গাঢ়, পায়ের দিক খাটো ও সোজা, স্ত্রী ও পুরুষ মহিষের ওজন যথাক্রমে ৩০০ ও ৩১৫ কেজি, দুধ উৎপাদনের তথ্য জানা নেই।
৯৫. বানিজ্যিক খামারে মহিষের খাদ্য খরচ কি রকম হতে পারে এবং খরচ কম হওয়ার কারণ কি?
• মহিষের খাদ্য খরচ মোট উৎপাদন ও রক্ষনাবেক্ষণ খরচের প্রায় ৬০%। মহিষ রাস্তার ধারের খাবার খায় বিধায় খাদ্য খরচ অপেক্ষাকৃত কম।
৯৬. মহিষকে কি কি সামগ্রীর খাদ্য খাওয়ানো হয়?
• সাধারণত রাস্তার ঘাস, ধানের খড়, আখের ডোগা, ছোবড়া, খৈল ও ভূট্টা খেয়ে জীবন ধারণ করে যার মধ্যে খাদ্যের পুষ্টি অনেক কম থাকে।
৯৭. মহিষকে কি কি কারণে খাদ্য দেয়া হয়?
• দৈহিক বৃদ্ধি, দেহ-রক্ষণ ও ক্ষয়-পূরণ, তাপ সংরক্ষণ ও পেশীর কর্মশক্তি যোগান, দুধ উৎপাদন ও প্রজনন ক্ষমতা বৃদ্ধির জন্য।
৯৮. মহিষের খাদ্যকে কি কি ভাগে ভাগ করা যায়?
• আঁশ-জাতীয় খাদ্য (তাজা ও শুষ্ক) দানাদার খাদ্য, সম্পূরক খাদ্য এবং অতিরিক্ত খাদ্য।
৯৯. আঁশ-জাতীয় খাদ্য কাকে বলে?
• যেসব খাদ্যে ১৮%-এর বেশি আঁশ থাকে এবং ৬০% -এর কম পরিপাচ্য খাদ্যপুষ্টি থাকে তাকে আঁশ-জাতীয় খাদ্য বলে।
১০০. কী ধরণের আঁশ-জাতীয় খাদ্য মহিষকে খাওয়ানো হয়?
• শুকনো এবং তাজা এ দু’ধরণের আঁশ-জাতীয় খাদ্য মহিষকে খাওয়ানো হয়্ ।
১০১. শুকনো আঁশ-জাতীয় খাদ্যের বৈশিষ্ট্য কি?
• এ জাতীয় খাদ্যে ১০-১৫% পানি বিদ্যমান থাকে, খড়, শুকনো ঘাস, আখের শুকনো ডগা, ভূট্টার শুকনো গাছ ইত্যাদি শুকনো আঁশ-জাতীয় খাদ্যের আওতাভুক্ত।
• এ জাতীয় খাদ্যে ১০-১৫% পানি বিদ্যমান থাকে, খড়, শুকনো ঘাস, আখের শুকনো ডগা, ভূট্টার শুকনো গাছ ইত্যাদি শুকনো আঁশ-জাতীয় খাদ্যের আওতাভুক্ত।
১০২. তাজা আঁশ-জাতীয় খাদ্যের বৈশিষ্ট্য ও উদাহরণ কি কি?
• তাজা আঁশ-জাতীয় খাদ্যে ৬০-৯০% পানি বিদ্যমান থাকে। সবুজ ঘাস, গাছের পাতা, গাছের মূল ইত্যাদি তাজা আঁশ-জাতীয় খাদ্যের উদাহরণ।
১০৩. মহিষ কোন-জাতীয় খাদ্য পছন্দ করে?
• আঁশ-জাতীয় খাদ্য বিশেষভাবে পছন্দ করে।
১০৪. শুকনো আঁশ-জাতীয় খাদ্য কি এবং কোথায় পাওয়া যেতে পারে?
• নেপিয়ার, পারা, জার্মান, জাম্বু, জোয়ার ইত্যাদি ঘাস মহিষের পছন্দনীয় খাদ্যসামগ্রী যেগুলো আবাদকৃত এবং চারণ-ভূমিতে পাওয়া যেতে পারে।
১০৫. উল্লিখিত এসব ঘাস ছাড়া আর কি কি তাজা ঘাস মহিষকে খাওয়ানো যেতে পারে?
• শিম-জাতীয় আঁশযুক্ত খাদ্য হিসাবে মটর, খেসারী, মাষকলাই ইত্যাদি অনেক সময় মহিষকে খাওয়ানো হয়।
১০৬. দানাদার খাদ্য বলতে কোন কোন খাদ্যকে বুঝায়?
• যেসব খাদ্যসামগ্রীতে ১৮%-এর কম আঁশ আছে এবং ৬০%-এর বেশি পরিপাচ্য খাদ্য পুষ্টি থাকে তাদেরকে দানাদার খাদ্য বলে।
১০৭. দানাদার খাদ্যের অন্যতম গুণাগুণ কি?
• দানাদার খাদ্য আমিষ অথবা বিপাকীয় শক্তিতে অনেক ক্ষেত্রেই সমৃদ্ধ থাকে।
১০৮. আমিষ উপাদানের ভি্ত্তিতে দানাদার খাদ্যকে কত ভাগে ভাগ করা যায়?
• স্বল্প আমিষযুক্ত(৫-১৫%, মধ্যম আমিষ-যুক্ত(২০-২৫%) এবং অধিক আমিষযুক্ত (৩৫%- এর বেশি)দানাদার খাদ্য।
১০৯. আমিষ-ভি্ত্তিক দানাদার খাদ্যের উদাহরণ কি কি?
• স্বল্প আমিষযুক্ত: চাউলের কুঁড়া, গমের ভূষি, ভূট্টা, চাউল ইত্যাদি; মধ্যম আমিষযুক্ত: কলাই, বুট, খেসারিসহ খৈল-জাতীয় খাদ্য এবং অধিক আমিষযুক্ত: সয়াবিন বীজ, শুকনো মাছ ও শুকনো রক্তের গুঁড়া ইত্যাদি।
১১০. মহিষের সম্পূরক খাদ্য বলতে কোন খাদ্যকে বুঝায়?
• সাধারণ খাদ্যে যথেষ্ট পরিমাণে পুষ্টি উপাদান না থাকলে বানিজ্যিকভাবে তৈরি যেসব খাদ্যে অতিরিক্ত পরিমাণে পুষ্টি উপাদান যথা খাদ্যপ্রাণ, খনিজ পদার্থ বা এমাইনো এসিড মিশানো হয় তাদেরকে সম্পূরক খাদ্য বলে।
১১১. জন্মের পর মহিষের বাচ্চাকে কি ধরণের খাবার খাওয়াতে হবে?
• সদ্য-প্রসূত মহিষের পাকস্থলীর রূমেন নামক অংশটি অপরিপক্ক থাকে বিধায় এই সময় বাচ্চাকে শালদুধ, সাধারণ দুধ, টানা দুধ, বিকল্প দুধ এবং প্রাথমিক খাদ্য (কাফ ষ্টারটার) খাওয়াতে হয়।
১১২. বাচ্চা মহিষের পাকস্থলী স্বাভাবিক করার জন্য কি করা যেতে পারে?
• পাকস্থলীর গঠন প্রক্রিয়া স্বাভাবিকভাবে ত্বরাণ্বিত হওয়ার জন্য কিছু কিছু উন্নতমানের ঘাস, শুকনা খড় খাওয়ানো যেতে পারে।
১১৩. এক দিন থেকে তিন মাস বয়স পর্যন্ত মহিষের বাচ্চাকে কি কি ধরণের খাবার খাওয়াতে হবে?
• প্রথম তিন দিন ২.৫ লিটার শালদুধ, ৪র্থ দিন থেকে ৪র্থ সপ্তাহ পর্যন্ত শালদুধ, ৫ম সপ্তাহ থেকে ৯ম সপ্তাহ পর্যন্ত টানা দুধ(১ লিটার দিয়ে শুরু), দ্বিতীয় সপ্তাহ থেকে ১৩তম সপ্তাহ পর্যন্ত প্রাথমিক খাদ্য(৫০ গ্রাম দিয়ে শুরু)
এবং উন্নতমানের ঘাস(২৫০ গ্রাম দিয়ে শুরু)।এক্ষেত্রে বিশদভাবে জানার জন্য বিঞ্জানীর বা পুস্তক-পুস্তিকার নির্দেশণা অনুসরণ করা যেতে পারে।
১১৪. মহিষের প্রাথমিক খাদ্য বলতে কোন-জাতীয় খাদ্যকে বুঝায়?
• এক ধরণের দানাদার খাদ্য যা অল্প বয়সের মহিষের বাচ্চাকে খাওয়ানো হয়। বেশ কয়েকটি দানাদার খাদ্যসামগ্রীর মিশ্রণে তৈরী এ খাদ্যে ২০-২৩% পরিপাচ্য আমিষ এবং ৭০-৭৩% সামগ্রিক পরিপাচ্য খাদ্য পুষ্টি থাকে।
১১৫. মহিষের প্রাথমিক খাদ্যের নমুনা কি রকম হতে পারে?
• ভাঙ্গাঁ-ভূট্টা ৫০%, খৈল ৩০%, ভূষি ৮%, গুঁড়া-মাছ বা দুধ ১০% এবং খনিজ পদার্থ ২%।
১১৬. মহিষকে খাওয়ানোর জন্য বিকল্প দুধ বলতে কোন দুধকে বুঝানো হয়?
• টানা দুধের গুঁড়া ৫৫ গ্রাম, ছানার পানি ৪৫ গ্রাম, অরিওমাইসিন সাপ্লিমেন্ট ৪৫০ গ্রাম, ভিটামিন এ-১০০০০ আই.ইউ. এবং ভিটামিন-ই ৫০০ আই.ইউ.।
১১৭. বকনা মহিষের খাদ্য সরবরাহ করতে কি কি বিষয় বিবেচনা করতে হয়?
• বকনা মহিষের দৈহিক ওজন, বয়স, দানাদার ও আঁশ-জাতীয় খাদ্যের উৎস, আমিষের পরিমাণ ও কর্মশক্তির পরিমাণ।
১১৮. মোটামুটি ১৫০ কেজি ওজনের একটি মহিষের জন্য (প্রতিদিন ৪৫০ গ্রাম দৈহিক ওজন বৃদ্ধির ক্ষেত্রে) কতটুকু খাদ্য লাগতে পারে?
• শুকনো পদার্থ ৩ কেজি, পরিপাচ্য আমিষ ০.৩২ কেজি, সামগ্রিক পরিপাচ্য খাদ্য-পুষ্টি ২.৩ কেজি, বিপাকীয় কর্মশক্তি ৮.৪ মেগাক্যালরী, ক্যালসিয়াম ৮ গ্রাম এবং ফসফরাস ৬ গ্রাম।
১১৯. উল্লিখিত খাদ্য উপাদানসমূহের চাহিদা কিভাবে পূরণ করা যেতে পারে?
• (ক) গমের খড়+দানাদার খাদ্য অথবা (খ) গমের খড়+সবুজ ঘাস+দানাদার খাদ্য অথবা (গ) সবুজ ঘাস+সামান্য দানাদার খাদ্য।
১২০. তিন থেকে ছয় মাস পর্যন্ত বয়সের বকনা মহিষের জন্য কি পরিমাণ খাবার দিতে হবে?
• দশ থেকে বার কেজি সবুজ ঘাস, ভূট্টা অথবা সংরক্ষিত সবুজ ঘাসের সাথে ১.২-১.৫ কেজি দানাদার অথবা সবুজ ঘাস ১৩ কেজি+খড় ২ কেজি+দানাদার খাদ্য ১.৫-২ কেজি।
১২১. ৬-১২ মাস বয়সের মহিষের বকনাকে কি ধরণের এবং কি পরিমাণে খাদ্য দিতে হবে?
• সবুজ ঘাস অথবা ভূট্টা ২০-২৫কেজি এবং ১.২৫ কেজি দানাদার খাদ্য অথবা সবুজ ঘাস ১৫ কেজি, খড়-৩ কেজি এবং দানাদার খাদ্য ২ কেজি।
১২২. তের মাস থেকে গর্ভধারণ পর্যন্ত বকনা মহিষকে কি পরিমাণ খাবার দিতে হবে?
• সবুজ ঘাস/ভূট্টা ৩০-৩৫ কেজি এবং দানাদার খাদ্য ২ কেজি।
১২৩. দুগ্ধবতী মহিষের খাদ্য কি জন্য দেয়া হয় এবং খাদ্য কত প্রকারের হতে পারে?
• শরীর রক্ষা এবং দুগ্ধ উৎপাদনের জন্য তিন প্রকার খাদ্য সরবরাহ করা হয় যথাঃ ১.সবুজ ঘাস ২. সবুজ ঘাসের সাথে গমের খড় অথবা ধানের খড় ৩. সবুজ ঘাসের সাথে গমের খড় অথবা ধানের খড় এবং দানাদার খাদ্য।
১২৪. পাঁচশত কেজি ওজনের দুগ্ধবতী মহিষ প্রতিদিন ১০ লিটার দুধ দেয় এবং দুধে ৭% চর্বি থাকলে এক্ষেত্রে কি পরিমাণ পুষ্টি সরবরাহ করতে হবে?
• মোট ৬.৫ কেজি শুষ্ক পদার্থ, ০.৯৩ কেজি পরিপাচ্য আমিষ, সামগ্রীক পরিপাচ্য পুষ্টি ৮.৩ কেজি, ক্যালসিয়াম ৫৩ গ্রাম, ফসফরাস ৪১ গ্রাম এবং ২৮৬ মেগাক্যালরী বিপাকীয় শক্তি সরবরাহ করতে হবে।
১২৫. উল্লিখিত পরিমাণে পুষ্টি সরবরাহ করতে কি পরিমাণে খাদ্য সরবরাহ করতে হবে?
• সবুজ ঘাস ৪০ কেজি, ধানের খড় ২ কেজি এবং দানাদার খাদ্য ২ কেজি।
১২৬. মহিষের ষাঁড়ের খাদ্য কি রকম হওয়া দরকার?
• ষাঁড়কে শুধু শরীর রক্ষার্থে (সবল ও সক্রিয়তার জন্য) খাদ্য প্রদান করা প্রয়োজন এবং এ কারণে শুধু সবুজ ঘাস ও খড় পরিমিত মাত্রায় খাওয়ানো যেতে পারে।
১২৭. ছয়শত কেজি ওজনের মহিষ-ষাঁড়ের জন্য প্রতিদিন কি পরিমাণ খাবার সরবরাহ করতে হবে?
• প্রতিদিন ৪০-৫০ কেজি সবুজ ঘাস এবং ২-৩ কেজি খড় অথবা ৫ কেজি কাঁচা ঘাস, ১০ কেজি খড় এবং ২ কেজি দানাদার খাদ্য সরবরাহ করতে হয়।
১২৮. মহিষকে ইউরিয়া খাওয়ানো যাবে কি?
• খড় অথবা আঁশ-জাতীয় খাদ্যের সংগে মিশিয়ে অথবা দানাদার খাদ্যের সংগে মিশিয়ে গরু মোটাতাজাকরণের নিয়মে খা্ওয়ানো যেতে পারে।
১২৯. গরু ও মহিষের খাদ্য গ্রহণ ও হজম শক্তিতে পার্থক্য কতটুকু?
• গরুর তুলনায় মহিষ ৭৩.১%-১১৬.৯% শুষ্ক পদার্থ খেতে পারে তবে দুগ্ধবতী মহিষ দুগ্ধবতী গাভীর তুলনায় ১৪% কম শুষ্ক পদার্থ খায়।
১৩০. মহিষ-বাছুরের পরিচর্যা কিভাবে করতে হয়?
• গরুর বাছুর প্রসবের পর যেরকম পরিচর্যা করা হয় মহিষের বাছুর প্রসবের পর ঠিক একই রকম পরিচর্যা করতে হবে।
১৩১. মহিষের বাছুরের বাসস্থান কি রকম হ্ওয়া দরকার?
• প্রতিটি মহিষের বাছুরের জন্য আলাদা ঘর থাকা ভাল, স্বাস্থ্য-রক্ষামূলক পরিষ্কার ব্যবস্থা গরুর বাছুরের প্রায় অনুরূপ।
১৩২. মহিষের প্রতিটি বাছুরের জন্য খোঁয়াড়ে কতটুকু জায়গার প্রয়োজন?
• প্রসবের পর এক মাস পর্যন্ত (১.৫×১.০) বর্গমিটার আকারের খোঁয়াড়ে রাখা হয়। পরবর্তীতে এক মাসের বেশি বয়স হলে ১০, ১৫, ২০ অথবা অধিক সংখ্যক বাছুরকে একত্রে একই ঘরে রাখা যাবে।
১৩৩. গ্রাম্ এলাকায় মহিষের বাছুরকে কিভাবে কোথায় রাখা হয়?
• প্রথমে ২-৩ সপ্তাহ পর্যন্ত গোয়াল ঘরের এক কোণায় প্রসূতি মহিষ থেকে সামান্য দুরে বেধে রাখা হয়।তারপর বাছুর ও প্রসূতি মহিষকে চাড়িতে একত্রে খাবার দেয়া হয়।
১৩৪. মহিষের বাছুরকে কিভাবে চিহ্নিত করা যায়?
• গরুর বাছুরের ন্যায় মহিষের বাছুর চিহ্নিত করা যায়।
১৩৫. মহিষের বাছুরের শিং কিভাবে ছেদন করা হয়?
• গরুর বাছুরের অনুরূপভাবে শিং ছেদন করা হয়।
১৩৬. মহিষকে খোঁজাকরণ করা হয় কিভাবে?
• গরুর বাছুরের অনুরূপভাবে মহিষকে খোঁজাকরণ করা হয়।
১৩৭. মহিষের বাচ্চার রক্ষাণাবেক্ষণে ফার্মে কি কি তথ্য সংগ্রহ করা হয়?
• জন্মগত সার্বিক ইতিহাস, খাদ্য তালিকা, স্বাস্থ্য ও জীবনিরাপত্তা এবং পরিচর্যা-সংক্রান্ত তথ্যাবলী লিপিবদ্ধ করা হয়।
১৩৮. অধিক বয়সে মহিষের বকনা বয়ঃসন্ধিক্ষণ প্রাপ্ত হয় এবং বাচ্চা প্রসব করে কেন?
• যথাযথ পরিচর্যা করা হয় না বিধায় অধিক বয়সে বয়ঃসন্ধিক্ষণ প্রাপ্ত হয় এবং বাচ্চা প্রসব করে।
১৩৯. মহিষের বকনার ঘরের পরিচর্যা কি রকম হওয়া দরকার?
• গরুর বকনার পরিচর্যার অনূরূপ হতে পারে।
১৪০. অ-গর্ভবতী বকনা মহিষের মেঝের পরিমাণ কতটুকু হতে পারে?
• অ-গর্ভবতী বকনা মহিষের জন্য ৫-৬ বর্গমিটার ছাদবিহীন এলাকা, ১-১.৫ বর্গমিটার ছাদযুক্ত এলাকা এবং প্রতি মহিষের জন্য ৫০-৭৫ সে.মি. দৈর্ঘবিশিষ্ট চাড়ি প্রয়োজন।
১৪১. গর্ভবতী বকনা-মহিষের (৯ মাসের কম) মেঝের পরিমাণ কতটুকু হতে পারে?
• মহিষ প্রতি ৮-১০ বর্গমিটার ছাদবিহীন স্থান, ৩-৪ ব.মি. ছাদযুক্ত স্থান, ৫০-৭৫ সে.মি. দৈর্ঘবিশিষ্ট চাড়ি প্রয়োজন।
১৪২. বাচ্চা প্রসবের কত দিন আগে গর্ভবতী মহিষকে আলাদা করতে হবে?
• প্রায় এক সপ্তাহ আগে আলাদা করে প্রসূতি ঘরে রাখতে হবে।
১৪৩. গর্ভবতী মহিষের ঘর কত আয়তনের হতে হবে?
• প্রসূতির ঘর কমপক্ষে ৯-১০ বর্গমিটার আয়তনের হওয়া উত্তম এবং ঘরের পরিবেশ স্বাস্থ্যসম্মত রাখতে হবে।
১৪৪. প্রসবের ৬-৮ সপ্তাহ আগে থেকেই কি ধরণের খাবার সরবরাহ করতে হবে?
• মহিষকে পুষ্টিসহ দানাদার খাদ্য সরবরাহ করতে হবে, প্রসবের এক সপ্তাহ পূর্বে প্রসূতি মহিষকে প্রচুর কাঁচা ঘাস এবং পানি সরবরাহ করতে হবে।
১৪৫. প্রসবকালীন সময় আসন্ন হলে কি কি পরিচর্যা করা হয়?
• গর্ভবতী গাভীর ক্ষেত্রে যে ধরণের পরিচর্যা করা হয় সে ধরণের পরিচর্যা করতে হবে।
১৪৬. দুধালো মহিষ থেকে বিশুদ্ধ দুধ পেতে হলে কি করতে হবে?
• দুধালো গাভীর ক্ষেত্রে করণীয় অনুরূপ ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে।
১৪৭. মহিষের খামারে এঁড়ে বাছুর কখন আলাদা করতে হবে?
• প্রায় ছয় মাস বয়সের সময় বকনা থেকে এঁড়ে বাছুর আলাদা ঘরে রাখতে হবে এবং এঁড়ে বাছুরের ঘর খোলামেলা রাখতে হবে।
১৪৮. এঁড়ে বাছুরের ঘরের মেঝের পরিমাণ কতটুকু হতে হবে?
• ছয় মাস থেকে বার মাস পর্যন্ত প্রতি বাছুরের জন্য ৪-৫ বর্গমিটার এবং ১২-২৪ মাস বয়স পর্যন্ত ৫-৬ বর্গমিটার বিশ্রামের স্থানের দরকার।
১৪৯. এঁড়ে বাছুরের ব্যায়ামের দরকার আছে কি?
• এঁড়ে বাছুরকে ত্রিশ মিনিট থেকে এক ঘন্টা ব্যায়াম করানো দরকার।
১৫০. মহিষের খামারে বাছুরের মৃত্যুর কারণ কি কি এবং মৃত্যুর শতকরা হার কত?
• নিমোনিয়া ৩৩.৮%, ডায়রিয়া ৩৫.৫%, নাভীর রোগ ২.১%, ক্ষুরা রোগ ২.১%, গলাফুলা রোগ ২.৭%, ব্লোট(পেট ফাঁপা)২.১% এবং এ্যাসকারিয়াসিস ২১.৭%।
১৫১. মহিষের সাধারণ পরিচর্যা বলতে কি কি করণীয়?
• পানির প্রতি বিশেষ আকর্ষণ থাকায় কাঁদা-পানিতে ছেড়ে রাখতে হবে।
১৫২. মহিষ কাঁদা-পানিতে গড়াগড়ি করতে পছন্দ করে কেন?
• মহিষের শরীরে ঘর্মগ্রন্থি তুলনামূলকভাবে খুবই কম তাই কাঁদামাটিতে গড়াগড়ি করে এরা শরীরের তাপমাত্রা সঠিক রাখতে পারে। মহিষের এই গড়াগড়ির অভ্যাসকে ইংরেজিতে ওয়ালোয়িং বলা হয়।
১৫৩. কাঁদা-মাটিতে সব এলাকার মহিষ কি গড়াগড়ি করতে পারে?
• লবণাক্ত পানিতে মহিষ সাধারণত গড়াগড়ি দেয় না। তাই যেখানে নদী, খাল, ডোবা, পুকুর ইত্যাদি নেই সেখানে মহিষ সাধারণত দেখা যায় না।
১৫৪. যেখানে জলাশ্রয় নেই সেখানে মহিষের তাপমাত্রা কিভাবে সঠিক রাখা যায়?
• ছায়াযুক্ত স্থানে পানির সাহায্যে সারা দিনে কম পক্ষে দু’বার মহিষের শরীরে পানি ছিটাতে হবে।
১৫৫. মহিষের অন্যান্য পরিচর্যা কি কি হতে পারে?
• মহিষের বয়স নির্ধারণ, গা-ঘষাঘষি, পায়ে সু-নীল লাগানো, খাওয়ানোর অভ্যাস করানো, সকল বয়সের মহিষের যথাযথ স্বাস্থ্যসম্মত ব্যবস্থা গ্রহণ ও জীবনিরাপত্তার ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে।
১৫৬. মহিষের মৃত্যুর সম্ভাবনা কি রকম?
• গরুর তুলনায় মহিষের রোগ-প্রতিরোধ ক্ষমতা কম তবে একবার রোগাক্রান্ত হলে মৃত্যুর সম্ভাবনা বেশি থাকে।
১৫৭. মহিষ কি কি রোগে আক্রান্ত হতে পারে?
• গলাফুঁলা, বাদলারোগ, তড়কা, ব্রুসেলোসিস, ওলান প্রদাহ, গো-বসন্ত, ক্ষুরারোগ, এ্যাসকারিয়াসিস, ফ্যাসিওলিয়াসিস, কিটোসিস, দুধ জ্বর, অনুর্বরতা এবং পুষ্টিহীনতাজনিত রোগ দ্বারা মহিষ আক্রান্ত হতে পারে।
১৫৮. মহিষের গলাফোলা রোগের ধরণ ও ক্ষতির পরিমাণ কি রকম?
• গলাফোলা এক ধরণের সংক্রামক রোগ, কম বয়সের মহিষ বেশি আক্রান্ত হয় এবং আক্রান্ত মহিষের প্রায় ৫০% মারা যায়।
১৫৯. কোন এলাকার মহিষ গলাফোলা রোগে বেশি আক্রান্ত হতে পারে?
• জলাভূমি, নদী-খাল ঘেরা এলাকায় এবং সমুদ্রকূল এলাকায় এ রোগের প্রাদুর্ভাব বেশি দেখা যায়।
১৬০. বছরের কোন সময়ে গলাফোলা রোগের সংক্রমণ বেশি হয়?
• মার্চ-মে মাসে সংক্রমণ বেশি হয়।
১৬১. গলাফোলা রোগে সদ্য আক্রান্ত মহিষের কি কি লক্ষণ দেখা দেয়?
• ক্ষুধামন্দা, নাকে-শ্লেষ্মা, গলা ফুলে যায় এবং শরীরের তাপমাত্রা বেড়ে যায়।
১৬২. গলাফোলা রোগের চিকিৎসা কি?
• স্ট্রেপটোপেন ভেট ইনজেকশন (২.৫ গ্রাম ) অথবা এসপি-ভেট (২.৫ গ্রাম) প্রতি ১০০ কেজি দৈহিক ওজন হিসেবে মাংসে অথবা শিরার মধ্যে প্রয়োগ করা যেতে পারে।
১৬৩. বাদলা রোগে মহিষের কি কি লক্ষণ দেখা দেয়?
• শরীরের তাপ অতি মাত্রায় বেড়ে যায়। মাংসপেশী ফুলে যায়, ক্ষুধামন্দা ইত্যাদি লক্ষণ দেখা দেয় এবং অনেক সময় মৃত্যু হার ৯০-৯৫% হতে পারে।
১৬৪. মহিষকে বাদলা রোগ থেকে রক্ষা করার উপায় কি?
• কোন এলাকায় রোগের প্রাদুর্ভাব দেখা দেয়ার আগেই টিকা প্রদান করতে হবে এবং আক্রান্ত মহিষকে এন্টিবায়োটিক দ্বারা চিকিৎসা করতে হবে।
১৬৫. বাদলা রোগের বিস্তার কিভাবে ঘটে?
• জীবাণু দীর্ঘকাল মাটিতে থাকার পর বর্ষার সময় কাঁদা-পানির সাথে বিস্তার লাভ করে।
১৬৬. মহিষের তড়কা রোগ কখন দেখা দেয়?
• তড়কা একটি সংক্রামক রোগ যার প্রকোপ গ্রীষ্মের শুরু থেকে সমগ্র বর্ষাকালে দেখা যায়। নিম্ন জলাভূমি থেকে নদী ও সমুদ্র উপকূলবর্তী এলাকায় এ রোগের প্রাদুর্ভাব বেশি ।
১৬৭. তড়কা রোগাক্রান্ত হলে মহিষের কি কি লক্ষণ দেখা দেয়, সর্বোচ্চ কি ক্ষতি হতে পারে?
• অতিমাত্রায় শরীরের তাপ বাড়ে, মাংসে সংকোচন ও কম্পন হয়, হঠাৎ মাটিতে গড়াগড়ি দেয় এবং মৃত্যুর পর পায়ুপথ দিয়ে রক্ত বের হয়। মৃত্যুর হার শতকরা ১০০ ভাগ হয়।
১৬৮. তড়কা রোগ থেকে কিভাবে মহিষকে নিরাপদে রাখা যায়?
• তড়কা রোগ দ্বারা মারাত্মকভাবে আক্রান্ত হলে কোন লক্ষণ প্রকাশের আগেই মহিষ মারা যাবে। আক্রান্ত মহিষ কয়েক ঘন্টার বেশি বাঁচে না। আক্রান্ত হওয়ার আগেই তড়কার টিকা অথবা এন্টি-এনথ্রাক্স সিরাপ প্রয়োগ করতে হবে।
১৬৯. মহিষের তড়কা রোগের চিকিৎসা আছে কি?
• লক্ষণ বুঝতে পারলে প্রতি ১০০ কেজি দৈহিক ওজনের মহিষকে প্রোনাপেন ভেট-৪০ লক্ষ অথবা কমবিপেন ভেট-৪০ লক্ষ দেয়া যেতে পারে।
১৭০. কোন রোগের কারণে মহিষের গর্ভপাত হতে পারে?
• ব্রুসেলাস এবরটাস নামক ব্যাক্টেরিয়া-ঘটিত সংক্রামক ব্রুসেলোসিস রোগ দ্বারা পৃথিবীর সব দেশের মহিষের গর্ভপাত ঘটতে পারে।
১৭১. ব্রুসেলোসিস রোগ দ্বারা মহিষের কি কি সমস্যা হতে পারে?
• বাচ্চা প্রসবের জটিলতা এবং অনুর্বরতা এই রোগের প্রধান লক্ষণ। এ কারণে মহিষের খামার লাভজনক হতে সমস্যা হয়।
১৭২. ব্রুসেলোসিসের কারণে মহিষের গর্ভধারণের কোন সময়ে গর্ভপাত হতে পারে?
• গর্ভকালের ৫-৭ মাসে সাধারনত একবারই গর্ভপাত হতে পারে।
১৭৩. গর্ভকালীন সময়ে গর্ভপাতের লক্ষণ কি কি হতে পারে?
• গর্ভপাতের প্রাক্কালে ভালভা মুখে সামান্য শিথিলতা এবং ভালভা হতে লাল রঙের স্রাব বের হয় এবং গর্ভস্থ বাচ্চা জীবিতাবস্থায় প্রসব হলেও গর্ভপাতের পর মারা যায়।
১৭৩. ছয়শত কেজি ওজনের মহিষ-ষাঁড়ের জন্য প্রতিদিন কি পরিমাণ খাবার সরবরাহ করতে হবে?
• প্রতিদিন ৪০-৫০ কেজি সবুজ ঘাস এবং ২-৩ কেজি খড় অথবা ৫ কেজি কাঁচা ঘাস, ১০ কেজি খড় এবং ২ কেজি দানাদার খাদ্য সরবরাহ করতে হয়।
১৭৪. গর্ভপাতের ফলে মহিষের বাচ্চা ধারণে কি সমস্যা হতে পারে?
• অধিকাংশে স্ত্রী মহিষের ক্ষেত্রেই গর্ভপাতের কয়েক মাস থেকে কয়েক বৎসর পর্যন্ত অনুর্বরতা দেখা দেয়।
১৭৫. ব্রুসেলোসিস রোগে পুরুষ মহিষের শারীরিক কি ক্ষতি হয়?
• পুরুষ মহিষের প্রজননহীনতা ও অনুর্বরতা ঘটে থাকে।
১৭৬. ব্রুসেলোসিস রোগের চিকিৎসা আছে কি?
• বর্তমানে সাধারণত চিকিৎসা করা হয় না তবে সালফাডায়াজিন এবং অন্যান্য এন্টিবায়োটিক দ্বারা ব্রুসেলোসিস রোগের জীবাণু ধ্বংস করা যেতে পারে।
১৭৭. ব্রুসেলোসিস রোগের প্রতিরোধ কিভাবে করা যায়?
• এগ্লুটিনেশন পরীক্ষার মাধ্যমে জীবাণু সনাক্তকরণ, অপসারণ, ধ্বংসকরণ এবং বাচ্চা অবস্থায় ব্রুসেলাস্টেইন টিকা প্রয়োগ করে অনেক দেশ থেকেই ব্রুসেলোসিস রোগ উচ্ছেদ করা সম্ভব হয়েছে।
১৭৮. ব্রুসেলোসিসে-আক্রান্ত মহিষ খামারে রাখা সুবিধাজনক হয় কি?
• আক্রান্ত হওয়ার পর সুস্থ হলেও গর্ভধারণে অক্ষম মহিষকে খামারে না রাখাই ভালো।
১৭৯. মহিষের ওলান প্রদাহ কখন দেখা দেয়?
• প্রসব পরবর্তীকালে দুগ্ধ-প্রদানকারী মহিষের ওলান প্রদাহ দেখা দেয়।
১৮০. ওলান প্রদাহে কি কি লক্ষণ দেখা দেয়?
• স্তনগ্রন্থির স্ফীতি, উষ্ণতা, গাঢ় লোহিত বর্ণ ও ব্যথাসহ উল্লেখযোগ্য লক্ষণ দেখা দেয়। দোহন করার পর পর দুধে জমাট রক্ত ও পুঁজ দেখা যায়।
১৮১. ওলান প্রদাহে আর কি কি লক্ষণ দেখা যায়?
• রোগের প্রথম অবস্থায় ওলানের তাপ বাড়ে এবং পরে তাপ কমে যায়, শরীর দূর্বল হয় ও বিমর্ষতা দেখা দেয়, নাড়ীর স্পন্দন বেড়ে যায়, ওলান জ্বলতে থাকে, লেজ, কান ও অন্যান্য অংগ প্রত্যঙ্গের শেষভাগে শীতলতা অনুভূত হয়।
১৮২. ওলান প্রদাহে মহিষের দুধ উৎপাদন সমস্যা হয় কি?
• ওলানের মাংসগাঠনিক সমস্যা দেখা দেয় এবং দুধ উৎপাদন ব্যাহত বা বন্ধ হতে পারে।
১৮৩. ওলান প্রদাহে আক্রান্ত মহিষের চিকিৎসা কি হতে পারে?
• রোগাক্রান্ত মহিষের আক্রান্ত বাঁট থেকে দুধ টেনে বের করতে হবে ও পরে এন্টিবায়োটিক জীবাণুনাশক ওষুধ বাটের ভিতর প্রয়োগ করতে হবে। ওলানের প্রদাহ বা ফোঁলা কমানোর জন্য বিশেষ কার্যকরী বরিক এসিড বা
ম্যাগনেশিয়াম সালফেট গুলিয়ে গরম পানিতে ন্যাকড়া বা কাপড় ভিজিয়ে ওলানের আক্রান্ত স্থানে সেক দিতে হবে।
১৮৪. মহিষের গো-বসন্ত কি ধরণের রোগ এবং এ রোগের লক্ষণসমূহ কি?
• মহিষের গো-বসন্ত হচ্ছে ভাইরাস দ্বারা সংক্রমিত সবচেয়ে মারাত্মক রোগ। এই রোগে আক্রান্ত মহিষ শতভাগ মারা যায় এবং রোগটি খুবই দ্রুত সমগ্র এলাকায় বিস্তার লাভ করতে পারে। শরীরের তাপমাত্রা বাড়ে,
জাবরকাটা বন্ধ হয়ে যায়, খুবই পাতলা পিছকারীরমত দূর্গন্ধযুক্ত পায়খানা হয়, মুখে ফেনা বের হয় এবং পায়খানার সাথে শ্লেষ্মা বের হয়।
১৮৫. মহিষের গো-বসন্ত রোগের চিকিৎসা আছে কি?
• কার্যকরী কোন চিকিৎসা ব্যবস্থা নেই যথা সময়ে টিকা প্রদানের মাধ্যমেই শুধুমাত্র মহিষের গো-বসন্ত রোগ দমন করা সম্ভব।
১৮৬. মহিষের গো-বসন্ত রোগের প্রতিরোধে মহিষকে কি ধরণের টিকা প্রদান করতে হবে?
• ছয় মাস কিংবা আরো বেশি বয়সের মহিষকে ফ্রিজ-ড্রাই গো-বসন্ত টিকা প্রদান করলে ঐ মহিষ সারা জীবনে আর গো-বসন্ত রোগে আক্রান্ত হবে না।
১৮৭. মহিষের ক্ষুরা রোগ কোন জীবাণু দ্বারা সংক্রমিত হয়?
• ফুট এন্ড মাউথ(ক্ষুরা রোগ)ভাইরাস এ ও এবং এশিয়া ওয়ান দ্বারা মহিষ আক্রান্ত হয়।
১৮৮. ক্ষুরা রোগে মহিষের কি কি ক্ষতি হয়?
• বয়স্ক মহিষ মারা যায় না তবে রোগ মুক্তির পরে বেশ দূর্বল হয়ে পরে এবং কৃষি কাজে ব্যবহার করা যায় না।
১৮৯. ক্ষুরা রোগের লক্ষণসমূহ কি?
• গরুতে যেসব লক্ষণ দেখা দেয় মহিষের ক্ষেত্রেও প্রায় একই রকম লক্ষণ দেখা দেয়। মহিষের বেলায় সাধারণত লক্ষনসমূহ হলো- শরীরের তাপমাত্রা বাড়ে, মুখে-পায়ে ঘা হয়, মুখ হতে লালা পড়ে, জিহ্বা ও মুখের মাঝখানে ক্ষত হয়, খাবার খেতে পারে না এবং মহিষ জাবর কাটতে পারে না।
১৯০. ক্ষুরা রোগের চিকিৎসা বা আক্রান্ত মহিষের পরিচর্যা কিভাবে করা উচিৎ?
• আক্রান্ত স্থানে জীবাণুনাশক ঔষধ যথা ৩-৫% ফিটকারী অথবা 0.৫% পটাশিয়াম-পারম্যাংগানেট দ্বারা ধুয়ে দিতে হবে, এতে মহিষ আরোগ্য লাভ করতে পারে, আরোগ্য লাভের পর পর্যাপ্ত পরিমাণে সুষম খাদ্য প্রদান করতে হবে।
১৯১. ক্ষুরা রোগের প্রাদুর্ভাব কিভাবে বন্ধ করা যায়?
• যে এলাকায় প্রাদুর্ভাবের সম্ভাবনা থাকে সে এলাকায় মহিষকে ক্ষুরা রোগের টিকা প্রদান করে এ রোগ নিয়ন্ত্রণ করা যায়। কঠোর জীবনিরাপত্তা ব্যবস্থা হিসেবে রোগাক্রান্ত কোন পশুকেই ক্ষুরা-রোগমুক্ত এলাকায় প্রবেশ করতে দেয়া যাবে না।
১৯২. মহিষের এসক্যারিয়াসিস বলতে কি বুঝায়?
• নিয়োএসকারিস ভাইটুলোরাম নামক পরজীবি দ্বারা ঘটিত একটি রোগের নাম। ইহা মহিষের বাছুরের একটি মারাত্মক রোগ। এ রোগে বাছুরের মৃত্যুর হার ৬০-৮০%।
১৯৩.এসক্যারিয়াসিস রোগে মহিষের বাছুর আক্রান্ত হয় কখন?
• জন্মগ্রহণের পূর্বে মাতৃগর্ভে অথবা প্রসব পরবর্তীকালে দুধ পান করার সময় মা থেকে বাছুরে এই রোগ সংক্রমিত হয়। সাধারণত সেপ্টেম্বর থেকে অক্টোবর এ দুই মাসে রোগের প্রাদুর্ভাব বেশি।
১৯৪. এসক্যারিয়াসিস রোগের লক্ষণ কি কি?
• পাতলা পায়খানা ও চোখ লাল হয়ে যাওয়া এ রোগের সাধারণ লক্ষণ, শরীরের তাপমাত্রা কমে যায়, খসখসে চামড়া, লোম ঝরে পড়ে, গলার পেছনের দিক বেঁকে যায়, পা ছড়িয়ে পড়ে এবং উগ্র স্বরে চিৎকার করতে থাকে, আস্তে আস্তে অবসন্ন হয়ে মারা যায়।
১৯৫. এসক্যারিয়াসিস রোগ থেকে মহিষকে কিভাবে রক্ষা করা যায়?
• মহিষের বাছুরের বয়স ১৫ দিন, ৩০ দিন এবং ৯০ দিন হলে পাইপারভেট পাউডার অথবা ইউভিলন প্রতি কেজি দৈহিক ওজনের জন্য ২০০ মিলিগ্রাম হিসাবে অথবা রেলনেক্স ৬০০ মিলিগ্রাম (৭.৫ মিলিগ্রাম প্রতি কেজি দৈহিক ওজনের জন্য) প্রয়োগে এসক্যারিয়াসিস থেকে মহিষকে রক্ষা করা যেতে পারে।
১৯৬. মহিষের ফ্যাসিওলিয়াসিস বলতে কোন রোগকে বুঝায় এবং এ রোগের সৃষ্টি বা বিস্তার কিভাবে ঘটতে পারে?
• ফ্যাসিওলা জাইগানটিকা নামক কৃমি দ্বারা এ রোগ হয়। অল্প বয়স্ক মহিষের ক্ষেত্রে এই রোগের তীব্রতা খুব বেশি।এই কৃমির মাধ্যমিক ধারক শামুকের মেটাসার কেরিয়াম এবং ঘাস খড়ের সাথে মিশে বর্ষার সময়ে এ রোগ বিস্তার লাভ করে।
মহিষের যকৃতে অধিক সংখ্যক সারকেরিয়া প্রবেশ করলে একিউট হেপাটাইটিস এবং রক্তক্ষরণের ফলে এই রোগ হয়।
১৯৭. ফ্যাসিওলিয়াসিস রোগের লক্ষণসমূহ কি?
• এ রোগের কারণে হঠাৎ করে বিশেষ করে রাতের বেলায় কিছু মহিষ মারা যায়। ক্ষুধামন্দা, নিস্তেজভাব, সামান্য তাপমাত্রা বাড়তি, পেটে ব্যথা এবং রক্তশূণ্যতা এ রোগের লক্ষণ হিসাবে দেখা দেয়।
১৯৮. মহিষের ফ্যাসিওলিয়াসিস রোগের চিকিৎসা কি হতে পারে?
• নাভাডেক্স বা এনডেক্স ট্যাবলেট বড় মহিষকে ৪-৮টি একবারে খালি পেটে খাওয়ালে এ রোগ প্রতিরোধ করা যাবে। সহায়ক চিকিৎসা হিসেবে বি-১২ এবং বি-কমপ্লেক্স ইনজেকশন দেয়া যেতে পারে।
১৯৯. মহিষের ফ্যাসিওলিয়াসিস রোগের প্রতিরোধে কি করতে হবে?
• বর্ষাকালে প্রতি মাসে কমপক্ষে ১ বার করে প্রত্যেক পশুকে কৃমিনাশক খাওয়াতে হবে। সন্দেহযুক্ত পরিবেশের ঘাস খাওয়ানো যাবে না। ঘাস তীব্র রোদে ভালোভাবে শুকিয়ে খাওয়াতে হবে। মাঠের শামুক মারার ব্যবস্থা করতে হবে। ১০০,০০০ ভাগ পানির সাথে ১ ভাগ তুঁতে মিশিয়ে মাঠে ছিটালে শামুক মারা যাবে। মাঠের গোবর এক জায়গায় স্তুপাকারে রাখতে হবে।
২০০. মহিষের কিটোসিস রোগ বলতে কি ধরণের রোগ বুঝায়?
• যে রোগ খাদ্যে কার্বোইড্রেট বা শর্করার গ্রহণ প্রণালীতে অসুবিধার কারণে দেখা দেয় তাকে কিটোসিস বলে।
২০১. কিটোসিস রোগের লক্ষণসমূহ কি?
• প্রাথমিকভাবে ক্ষুধামন্দা, জাবর না-কাটা, আস্তে আস্তে ওজন কমে যায়, পেটের অসুখ দেখা দিতে পারে এবং প্রস্রাব পায়খানায় এ্যামিটনের গন্ধ পাওয়া যায়।
২০২. কিটোসিস দেখা দিলে কি চিকিৎসা করতে হবে?
• সাধারণভাবে ৫% ডেক্সট্রোজ স্যালাইন, ক্যালসিয়াম ও কটিকোস্রেরোইড-জাতীয় ঔষধ খাওয়ালে মহিষ তাড়াতাড়ি ভালো হয়ে যাবে। প্রতিরোধ হিসাবে প্রচুর পরিমাণে কার্বোহাইড্রেট খাবার সরবরাহ করতে হবে।
২০৩. মহিষের মিল্ক-ফিডার বা দুধজ্বর বলতে কোন রোগকে বুঝায়?
• সাধারণত খনিজ ক্যালসিয়ামের অভাবে মহিষের এ রোগ হয়ে থাকে।
২০৪. মহিষের মিল্ক-ফিডার রোগের লক্ষণসমুহ কি?
• ক্ষুধামন্দা, জাবর না-কাটা, নাক মুখে লালা পড়া, শরীরের তাপমাত্রা বাড়া এবং পেটের দিকে ঘাড় রাখা এ রোগের সাধারণ লক্ষণ।
২০৫. মহিষের মিল্ক-ফিডার রোগ হলে কী চিকিৎসা হতে পারে?
• গলার জগুলার শিরার মধ্যে দিয়ে ক্যালডিম্যাক বা মাইফিনিলভেট ইনজেকশন দিতে হবে, খাদ্যে প্রচুর পরিমাণে ক্যালসিয়াম দিতে হবে।সাধারণ খাবারের সাথে খনিজযুক্ত খাবারও দিতে হবে।
২০৬. মহিষের অনুর্বরতা বলতে কি বুঝায়?
• যে মহিষকে পাল দেয়ার পর গর্ভধারণ করে না অথবা স্বাভাবিকভাবে যথা সময়ে গরম হয় না তখন তাকে অনুর্বর মহিষ বলা হয় এবং বাচ্চা না-দেয়ার অনুর্বরতা বলা হয়।
২০৭. উর্বর মহিষের বৈশিষ্ট্যসমূহ কি?
• দুই থেকে তিন বৎসর বয়সে মহিষ বয়ঃসন্ধিপ্রাপ্ত হয় এবং কামোত্তেজনা দেখা দেয়। গর্ভসঞ্চার না হলে তিন সপ্তাহের মধ্যে পুণরায় গরম হয়, গর্ভধারণের ক্ষেত্রে দুইবারের অধিক পাল দেয়ার বা কৃত্রিম প্রজননের প্রয়োজন হয় না, ১৫-১৬ মাস পরপর বাচ্চা দেয়, স্বাভাবিক বাচ্চা প্রসবের পর ৬০ দিনের মধ্যে আবার গরম হবে এবং ৯০ দিনের মধ্যে গর্ভধারণ করবে, গর্ভসঞ্চার হার ৮০% এবং বাচ্চা দেয়ার হার ৭৫% এর কম হবে না এবং স্বাভাবিকভাবে বাচ্চা প্রসব করবে।
২০৮. অনুর্বর মহিষের বৈশিষ্ট্যসমূহ কি?
• অনুর্বর স্ত্রী-মহিষ দুইবার পাল দেয়ার পরেও গর্ভধারণ করে না, প্রথম গরম হওয়ার ১০ দিন কমে অথবা ২৮ দিনের ব্যবধানে গরম হয়, মোটেই গরম হয় না অথবা সর্বদাই গরম থাকে।
২০৯. স্ত্রী-মহিষ উর্বর কি অনুর্বর তা বুঝতে সমস্যা হলে কি করতে হবে?
• অভিঞ্জ পশু-ডাক্তারের শরণাপন্ন হওয়া ভাল।
২১০. স্ত্রী-মহিষের অনুর্বরতার কারণসমূহ কি হতে পারে?
• পুষ্টিগত, বংশগত, ব্যবস্থাপনাগত, হরমোনের গোলযোগগত এবং অনুর্বরতার ব্যাধিগত কারণে স্ত্রী-মহিষ অনুর্বর হতে পারে।
২১১. স্ত্রী-মহিষের অনুর্বতার ব্যাধিসমূহের নাম কি?
• ব্রুসেলোসিস, ভিবরিওসিস, ট্রাইকোমোনিয়েসিস, ম্যাসট্রাইটিস, সালপিনজাইটিস, সার্ভিসাইটিস ইত্যাদি ব্যাধির কারণে স্ত্রী-মহিষ অনুর্বর হতে পারে।
২১২. উল্লিখিত রোগসমূহ প্রতিরোধের জন্য কি কি ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে?
• সুনির্দিষ্ট ও কার্যকরী সরকারী প্রশাসনিক কাঠামো তৈরি, মহিষের শুমারী করা, রোগ চিহ্নিত করে চিকিৎসাকরণ, টিকা ও সিরাম প্রদান, রোগ-প্রতিরোধক আইন প্রনয়ণ, সঠিক পরিচর্যা, বাসস্থান ও সুষম খাদ্যের নিশ্চয়তা বিধান, রোগ-ব্যাধি সম্পর্কে যথোপযুক্ত গবেষণা কার্যক্রম পরিচালনা, শিক্ষা, প্রশিক্ষণ ও প্রচার মাধ্যমে জনসাধারণকে রোগব্যাধি সম্পর্কে সচেতনকরণ।
২১৩. মহিষের সংক্রামক রোগ দেখা দিলে কি করতে হবে?