লেয়ার পালন
ভূমিকা
উর্বর ডিম থেকে প্রস্ফুটিত একদিনের স্ত্রী বাচ্চা ধারাবাহিক ও সংশ্লিষ্ট ব্যবস্থাপনায় সার্বিক যত্নে বড় হয়ে ডিমপাড়া মুরগীতে রুপান্তরিত হয়ে থাকে। বিজ্ঞান-ভিত্তিক আধুনিক প্রযুক্তি এবং লালন পালন পদ্ধতির উদ্ভাবন কিংবা বিকাশের পূর্বে ছেড়ে-খাওয়া পদ্ধতিতে কুঁচে মুরগীর স্বমাতৃক(মাতৃসুলভ) তত্বাবধানে সদ্য প্রস্ফুটিত বাচ্চা আমাদের দেশসহ এশীয় অপরাপর দেশে পারিবারিক পর্যায়ে লালিত পালিত হত। বর্তমানে মনুষ্য সভ্যতা এবং যন্ত্রনির্ভর শিল্পের ক্রমবিকাশের সাথে সাথে জনজীবনের নিত্য প্রয়োজন মিটানোর স্বার্থে আধুনিক প্রযুক্তির সফল প্রয়োগের মাধ্যমে ডিমপাড়া মুরগী পালন করে সর্বাধিক ডিম উৎপাদন করানো সম্ভব হচ্ছে। উল্লেখ যে, যীশুখ্রীষ্টের জন্মের ৫০০-৬০০ বৎসর আগে রোমানীয়দের দ্বারা সর্বপ্রথম গৃহপালিত ব্যবস্থায় স্বাস্থ্যসম্মত আরামদায়ক পদ্ধতিতে মোরগ-মুরগি পালন শুরু হয়েছিল। আধুনিককালে জীবাণুমুক্ত উর্বর ডিম থেকে সুস্বাস্থ্যের অধিকারী বাচ্চা ফুটানো এবং ডিমপাড়ার উপযোগী পুলেট ও মুরগী উৎপাদন অনেকাংশেই ফলপ্রসু প্রযুক্তি নির্ভর এবং ধৈর্যের ব্যাপার। এমন ইচ্ছানির্ভর ক্ষেত্রে সুস্বাস্থ্যের বাচ্চা উৎপাদন/সংগ্রহ, তাপানো(ব্রুডিং করা), আলো সরবরাহ, খাদ্য ও পুষ্টি সরবরাহ, সুস্বাস্থ্যের আরামদায়ক বাসস্থান রক্ষনাবেক্ষণ, জৈব নিরাপত্তা বিধান, উৎপাদিত ডিম সংগ্রহ, সংরক্ষণ এবং প্রয়োজন সাপেক্ষে যথার্থ ব্যবস্থাপনার পদক্ষেপ গ্রহণ করা অত্যাবশ্যক যা লাভজনক মুরগী পালনের সুবিধার্থে অত্র প্রশ্নোত্তর পর্বের অনুচ্ছেদে সাধ ও সাধ্যর সমণ্বয়ে সারসংক্ষেপে আলোচনা করা হয়েছে।
সংশ্লিষ্ট তথ্য
১. লেয়ার মুরগী বলতে কোন মুরগীকে বুঝায়?
• যে সকল মুরগী শুধুমাত্র ডিম উৎপাদনের জন্য পালন করা হয় তাদেরকে লেয়ার মুরগী বলে।
২. লেয়ার মুরগী কত সপ্তাহ লাভজনক হারে ডিম দেয়?
• প্রায় ৭৫ সপ্তাহ বয়স পর্যন্ত লেয়ার মুরগী লাভজনক হারে ডিম দিতে পারে।
৩. ভালো জাতের লেয়ার মুরগী বছরে সাধারণত কতগুলো ডিম পাড়ে?
• প্রায় ৩০০–৩৪০টি।
৪. ডিম উৎপাদন ছাড়া লেয়ার মুরগী কি উপকারে আসে?
• ডিম পাড়ার বয়স শেষে মাংসের উৎস হিসাবে খাওয়া যায়। বর্তমানে ব্রয়লারের তুলনায় যার দাম অবিশ্বাস্য হলেও অনেকটা বেশি। মুরগীর বিষ্টা জমির সার হিসাবে, মাছের খাদ্য হিসাবে ও গ্যাস তৈরির কাজে ব্যবহার করা যায়।
৫. ডিমের ভালো গুণগুলো কি?
• সকল পুষ্টিসমৃদ্ধ, সুস্বাদু ও সকল স্তরের মানুষের পছন্দনীয় খাদ্য, ভাত ও দুধের তুলনায় ডিমে বেশি ভিটামিন থাকে। আধুনিক প্রসাধনী তৈরিতে ডিমের ব্যবহার অনেক বেশি।
৬. ডিম থেকে কি কি প্রসাধনী তৈরি হয়?
• শ্যাম্পু, ক্রীম, মলম, তেল, সুগন্ধি ও নেইল পলিস ইত্যাদি তৈরি করা হয়।
৭. ডিমের অন্যান্য ব্যবহার কি কি?
• গরুর কৃত্রিম প্রজননে সিমেন সংগ্রহ ও বাড়ানো, বেকারিতে, পোড়া রোগীর চিকিৎসা ও অন্যান্য প্রয়োজনে ডিমের ব্যবহার হয়ে থাকে।
৮. লাভজনক লেয়ার খামার পরিকল্পনার জন্য কি কি দরকার?
• প্রয়োজনীয় মুলধন, সঠিক জায়গা, বাস্তবমুখী পরিকল্পনা, লেয়ার মুরগীর জাত, বাচ্চা-প্রাপ্তির সহজ উৎস, সুলভে সুষম খাদ্য, লাভজনক বাজারজাতকরণ, রোগ-প্রতিরোধের ব্যবস্থা ও লেয়ার খামার পরিকল্পনার সম্যক ধারণা থাকা।
৯. লেয়ার বাচ্চা সাধারণত কত সপ্তাহ পালতে হয়?
• আট সপ্তাহ বা দুই মাস তবে আবহাওয়ার প্রেক্ষাপটে এ বয়স বাড়তে বা কমতে পারে।
১০. বাচ্চার মৃত্যুর হার কমানোর জন্য কি কি করতে হবে?
• অধিক রোগ-প্রতিরোধ ক্ষমতাসম্পন্ন বাচ্চা এবং ফলপ্রসূ পালন ব্যবস্থা রক্ষা করতে হবে।
১১. মুরগীর বাচ্চা যে ঘরে পালন করা হয় তাকে কি ঘর বলে?
• ব্রুডিং ঘর বা বাচ্চা পালনের ঘর বলা হয়।
১২. বাচ্চা কি কি পদ্ধতিতে পালন করা হয়?
• প্রাকৃতিক পদ্ধতি অর্থাৎ মুরগীর নিজস্ব ব্যবস্থাপনায়, কৃত্রিম পদ্ধতি কুঁচে মুরগীর মত একই ব্যবস্থাপনার সকল শর্ত রক্ষা করে মানুষের দ্বারা বাচ্চা পালিত হয়।
১৩. প্রাকৃতিক পদ্ধতি কোথায় কোথায় পালিত হয়?
• গ্রামীণ ডিম উৎপাদনে ১০০% বাচ্চা কুঁচে-মুরগীর মাধ্যমে পালন করা হয়।
১৪. প্রাকৃতিক বা কৃত্রিম উপায়ে কত দিন বাচ্চা পালতে হয়?
• পালক দ্বারা বাচ্চার গা না-ঢাকা পর্যন্ত বাচ্চা মুরগীর মত যত্ন করে পালতে হয় কারণ এসময় বাচ্চা শরীরের তাপ নিজেরা রক্ষা করতে পারে না।
১৫. প্রাকৃতিক উপায়ে একটি দেশীয় মুরগী কয়টি ডিম থেকে বাচ্চা ফুটাতে পারে?
• প্রায় ১৫টি দেশীয় ডিম থেকে বাচ্চা ফুটাতে পারে তবে ১২টির বেশি বিদেশী ডিম না বসানোই উত্তম।
১৬. দেশীয় মুরগী কতগুলো বাচ্চা পালতে পারে?
• দেশীয় মুরগী প্রায় ১৫-১৬টি বাচ্চা পালতে পারে। বিদেশী মুরগী কখনো বাচ্চা পালন করে না কারণ এটি এ জাতের একটি বৈশিষ্ট্য।
১৭. কৃত্রিম পদ্ধতিতে কত দিন বাচ্চা পালন করতে হয়?
• চার থেকে ছয় সপ্তাহ তবে প্রাকৃতিক পদ্ধতিতে যে বিষয় উল্লেখ করা হয়েছে এক্ষেত্রেও তা একইভাবে প্রযোজ্য।
১৮. কৃত্রিম উপায়ে বাচ্চা পালনের ক্ষেত্রে কি কি বিষয়ের উপর বিশেষ গুরুত্ব দেয়া উচিত?
• সঠিক তাপমাত্রা, পরিমিত খাদ্য, পানি, উপযুক্ত আলো-বাতাস চলাচল, বিছানা ও সার্বিক জীবনিরাপত্তা ইত্যাদি।
১৯. ব্রুডার কাকে বলে?
• যে যন্ত্রের সাহায্যে তাপ দেয়া হয় তাকে ব্রুডার বলে।
২০. কৃত্রিম উপায়ে কোন ক্ষেত্রে বাচ্চা পালা হয়?
• বাণিজ্যিক খামারে কৃত্রিম উপায়ে বাচ্চা পালা হয়।
২১. কৃত্রিম পদ্ধতি কি কি ধরণের হতে পারে?
• লিটার বা বিছানা ও খাঁচা পদ্ধতি।
২২. লিটার বা বিছানা পদ্ধতিতে কি কি প্রয়োজন হয়?
• ব্রুডার, চিক গার্ড, ব্রুডার চুল্লি, খাবার ও পানির পাত্র, বিছানা, থার্মোমিটার, বাল্ব/হারিকেন ও হাইগ্রোমিটার ইত্যাদি।
২৩. ব্রুডিং শুরুর পূর্বে কি কি করতে হবে?
• বাচ্চা সংগ্রহে নিশ্চিত থাকতে হবে, এক সপ্তাহ পূর্বে ঘর পরিষ্কার করে জীবাণুনাশক ছড়াতে হবে, তাপমাত্রা ও সকল যন্ত্রপাতি সঠিকভাবে থাকতে হবে। বাচ্চার জন্য ২-৩ দিনের খাবারের ব্যবস্থা থাকতে হবে।
২৪. কিভাবে ঘরের জীবাণু নাশ করা যাবে?
• প্রতি ১০০ বর্গমিটার জায়গার জন্য ৩০% ফরমালিন ১.৬ লি., ০.৮ কেজি পটাশিয়াম পারম্যাংগানেট ০.৮ লিটার পানিতে মিশিয়ে ছিটাতে হবে।
২৫. পাঁচশত বাচ্চার জন্য কি মাপের চিক গার্ড লাগে?
• হার্ডবোর্ড অথবা টিনের তৈরি ৪৫-৪৬ সে.মি. উচ্চতার ও ৩.২৫ মিটার ব্যাসের চিকগার্ড লাগবে।
২৬. লেয়ার মুরগীর বিছানা কেমন হওয়া উচিত?
• চিকগার্ডের ভিতরে হোভারের (তাপাধার গোলাকার ছাউনী) নিচে ৮-১০ সে.মি. পুরু লিবার (বিছানা) তুষ, খড়, করাতের গুঁড়া, বালু ইত্যাদি জিনিস বিছাতে হবে।
২৭. লেয়ার মুরগীর জন্য কি মাপের ব্রুডার দিতে হবে?
• প্রায় ৪ ফুট ব্যাসের ব্রুডারে ৫০০ বাচ্চার জন্য একটি ব্রুডার দিতে হবে।
২৮. বাজারে কি কি নামের ব্রুডার পাওয়া যায়?
• তুকেনী ইলেকট্রিক ব্রুডার, হিটার বা গ্যাস ব্রুডার, রাইনন্দ ক্যানোপি হিটার বা গ্যাস ব্রুডার, ইনফ্রারেড ইলেকট্রিক ব্রুডার, হারিকেন ও স্টোভ ইত্যাদি।
২৯. এসব ব্রুডার ছাড়া সহজে ব্যবহার করা যায় কোনটি?
• বৈদ্যুতিক বাল্ব ঢাকনাসহযোগে তৈরি ইলেকট্রিক ব্রুডারে তাপ দেয়া যায়।
৩০. কয়টি বৈদ্যুতিক বাল্ব ব্যবহার করা উচিৎ?
• ১০০ ওয়াটের ৩-৪টি বাল্ব ৩০০-৪০০ বাচ্চাকে তাপ দিতে পারে।
৩১. বাচ্চা আসার কত ঘন্টা আগে ব্রুডার চালু করতে হবে?
• প্রায় ১২ ঘন্টা আগে ৯৫ ডিগ্রি ফা. তাপ রাখার ক্ষেত্রে চালু রাখতে হবে।
৩২. বাচ্চার ওজন বাড়া আর সময় পার হওয়ার সাথে সাথে কি হারে তাপমাত্রা কমাতে হবে?
• ৯৫ ডিগ্রি ফা. থেকে শুরু করে প্রতি সপ্তাহে ৫ ডিগ্রি ফা. হারে কমিয়ে তাপ দিতে হবে।
৩৩. তাপ সঠিক মাত্রায় আছে কিনা তা কিভাবে বুঝা যাবে?
• আরামদায়ক তাপমাত্রায় বাচ্চা সমহারে চিকগার্ডের ভিতরে বিচরণ করবে, তাপ কম হলে বাচ্চা গাদাগাদি অবস্থায় থাকবে। আর তাপমাত্রা সহ্যের উপরে হলে বাচ্চা সব সময় ছুটাছুটি এবং চিঁচিঁ শব্দ করবে ও বেশি বেশি পানি খাবে, খাবার কম খাবে।
৩৪. বাচ্চার ঘরের আর্দ্রতা কি পরিমাণ থাকতে হবে?
• বাচ্চার ঘরের আর্দ্রতা ৫৫-৬৫% পর্যন্ত থাকা ভালো।
৩৫. বেশি আর্দ্রতায় কি সমস্যা হবে?
• বিছানা ভেজা থাকবে, খাবার স্যাঁতস্যাতে হবে, খাবার গ্রহণ কমে যাবে ও আশানুরূপ মুরগীর ওজন বাড়বে না।
৩৬. প্রথম প্রথম কিভাবে পানি সরবরাহ করতে হবে?
• প্রথম ১২ ঘন্টা প্রতি লিটার পানিতে ৫০ গ্রাম চিনি মিশিয়ে ১৬-২০ ডিগ্রি সে. তাপমাত্রায় খাওয়াতে হবে।
৩৭. প্রথম প্রথম কিভাবে খাবার দিতে হবে?
• মোটা কাগজ, চট বা বিশেষভাবে তৈরি পাত্রে ভাঙ্গা গম বা ভূট্টা ছিটিয়ে দিতে হবে। প্রতিদিন কাপ বদলাতে বা পরিষ্কার করতে হবে।
৩৮. এ সময় খাওয়ানোর ক্ষেত্রে কি সতর্কতা পালন করতে হবে?
• খাবার যাতে বিছানায় না মিশে বা বিছানায় না পড়ে এবং বাচ্চা ঠিকমত খাচ্ছে কিনা তা সামান্য দূর থেকে খেয়াল রাথতে হবে।
৩৯। তিন-চার দিন পরে কিভাবে খাদ্য ও পানি দিতে হবে?
• কাঠ, টিন, প্লাষ্টিক, বাঁশ বা মাটির তৈরি পাত্রে খাবার দেয়া যাবে। লম্বা অথবা গোলাকার টিনের, প্লাষ্টিক অথবা মাটির তৈরি পাত্রে পানি দিতে হবে।
৪০. কয়টি খাবার পাত্র ও পানির পাত্র দিতে হবে?
• প্রতি ২৫টি বাচ্চার জন্য একটি খাবার পাত্র এবং ৭৫×৬০×৫ সে.মি. মাপের একটি পানির পাত্র দিতে হবে।
৪১. বয়স বৃদ্ধির পর্যায়ক্রমে ৪ সপ্তাহ পর্যন্ত প্রতিদিন প্রতি বাচ্চার জন্য কতটুকু খাবার লাগবে?
• ১ম, ২য়, ৩য় ও ৪র্থ সপ্তাহে প্রতিদিন যথাক্রমে ১০, ২০, ৩০ ও ৪০ গ্রাম খাবার লাগবে।
৪২. দশ থেকে এগার সপ্তাহ বয়সী একটি লেয়ার বাচ্চার জন্য প্রতিদিন কতটুকু খাবার লাগবে?
• প্রতিদিন ১০০ গ্রাম হিসাবে খাবার লাগবে।
৪৩. ব্রুডার ঘরে কি পরিমাণ আর্দ্রতা থাকা দরকার?
• ব্রুডার ঘরে প্রায় ৫০-৬০% আর্দ্রতা এবং স্বাভাবিক আলো-বাতাসের চলাচল থাকতে হবে।
৪৪। বিছানা স্যাঁতস্যাঁতে হলে কি ব্যবস্থা নিতে হবে?
• চার থেকে ছয় বর্গমিটার বিছানাতে আধা কেজি শুকনা চুন ছিটিয়ে বিছানা নাড়া-চাড়া করে উল্টিয়ে দিতে হবে।
৪৫. আলো কম হলে মুরগীর কি ক্ষতি হবে?
• খাদ্য গ্রহণ কমে যাবে এবং হজম শক্তি কমে যাবে।
৪৬. বাচ্চা পালার খাঁচা কি রকম হতে হবে?
• খাঁচার গঠন ও বিন্যাস এমনভাবে হবে যাতে বাচ্চার চলাফেরার ব্যবস্থা থাকে, পর্যাপ্ত পরিমাণে তাপ, আলো ও বাতাস পায় এবং সহজে পানাহার করতে পারে।
৪৭. বাচ্চার পরিবেশ কি রকম হওয়া দরকার?
• পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন ও জীবাণুমুক্ত হতে হবে এবং রোগ প্রতিরোধের জন্য টিকা প্রদান করতে হবে।
৪৮. খাঁচায় কি পরিমাণ জায়গার দরকার?
• প্রথম ৩ দিনে ১ বর্গমিটারে ৮০টি বাচ্চা রাখতে হবে, পরের তিন সপ্তাহে ১ বর্গমিটারে ৪৫-৫০টি বাচ্চা রাখতে হবে।
৪৯. খাদ্য, পানি ও আলো সরবরাহ কি রকম হবে?
• লিটার পদ্ধতির অনুরূপ হতে পারে।
৫০. বাড়ন্ত লেয়ার মুরগী বলতে কোন মুরগীকে বুঝায়?
• দুই-চার মাস বয়সের লেয়ার মুরগীকে বাড়ন্ত লেয়ার মুরগী বলে।
৫১. লেয়ার পুলেট কাকে বলে?
• লেয়ার পুলেট হচ্ছে ১৪ সপ্তাহ থেকে প্রথম ডিম দেয়ার পূর্ব-বয়সী মুরগীর বাচ্চা।
৫২. সব পুলেট পালা লাভজনক হবে কি?
• না, গড় ওজনের নিচের ওজনের পুলেট থেকে ভালো ডিম উৎপাদন আশা করা যাবে না।
৫৩. বাড়ন্ত বয়সে সঠিক মাত্রায় মুরগীর খাদ্য-পুষ্টি না পেলে কি হবে?
• ডিম পাড়ার বয়সে ডিম উৎপাদন আশানুরূপ হবে না।
৫৪. বাড়ন্ত লেয়ার বাচ্চা কতটুকু খাবার খায়?
• প্রায় ৬০-৯০ গ্রাম সুষম খাদ্য খায়।
৫৫. কোন বয়সে বাড়ন্ত মুরগীকে ডিমপাড়ার ঘরে স্থানান্তর করতে হবে?
• বাড়ন্ত মুরগীকে ১৭-১৮ সপ্তাহের বয়সে ডিমপাড়ার ঘরে স্থানান্তর করা উচিৎ।
৫৬. কি ধরণের বাসস্থানে লেয়ার মুরগী পালন করা যায়?
• ডিপ লিটার, মাচা, লিটার এবং খাঁচা পদ্ধতিতে লেয়ার মুরগী পালন করা যায়।
৫৭. সনাতন পদ্ধতিতে কোন ধরণের বাসস্থানে ডিমপাড়া মুরগী পালা হতো?
• বসতবাড়ীর উঠানে এবং চারপাশে ছেড়ে মুরগী পালন করা হতো, রাতে খোঁয়াড় বা খোপে আটকে রেখে ছেড়ে দেয়া হতো, খোঁয়াড় বা খোপে আজও গ্রামে মুরগী পালা হয়। বিছানা হিসাবে সাধারণত ছাই বা বালু দেয়া হয়।
৫৮. ছেড়ে-খাওয়ানো পদ্ধতির সুবিধা কি কি?
• পর্যাপ্ত আলো বাতাস পায়, তেমন কোন খাদ্য সরবরাহ করা হয় না, কৃষি কাজের উপজাত, পোকা মাকড় ও রান্না ঘরের উচ্ছিষ্ট খেতে পারে।
৫৯. ছেড়ে-খাওয়ানো পদ্ধতিতে অসুবিধা কি কি?
• সব ডিম সংগ্রহ করা সম্ভব হয় না, রোগের প্রাদুর্ভাব বেশি হতে পারে, বন্যপ্রাণি এবং পাখির উৎপাত বেশি থাকে।
৬০. আধুনিক পালন পদ্ধতিতে বানিজ্যিকভাবে ডিমপাড়া মুরগী কোন কোন পদ্ধতিতে পালা যায়?
• সীমিত জায়গায় এবং আবদ্ধাবস্থায় চার পদ্ধতিতে ডিমপাড়া মুরগী পালা যায় যথা লিটার বা ডিপ লিটার পদ্ধতি, খাঁচা পদ্ধতি এবং মাঁচা পদ্ধতি, লিটার ও খাঁচা পদ্ধতি।
৬১. লিটার বা ডিপ লিটার পদ্ধতি বলতে কোন পদ্ধতি বুঝায়?
• পুরু ও মোটামুটি স্থায়ী বিছানাতে পালনের পদ্ধতিকে লিটার বা ডিপ লিটার পদ্ধতি বলে।
৬২. কতটুকু পুরু করে কোন সামগ্রী দ্বারা বিছানা দেয়া যেতে পারে?
• সাধারণত ধানের তুষ, করাতের গুঁড়া, খড় বা ভূট্টার ছোবড়া ২-৩ ইঞ্চি পুরু করে বিছানা দেয়া যায়। বর্তমানে ৪-৮ ইঞ্চি পুরু করেও বিছানা দেওয়া হয়। এ পদ্ধতিকে ডিপ লিটার বলা হয়।
৬৩. ডিপ লিটার পদ্ধতির সুবিধা এবং অসুবিধা কি কি?
• ঘণঘণ ঘর পরিষ্কার করা লাগে না, ঘর শুকনা ও দূর্গন্ধমুক্ত থাকে, গাজানো প্রক্রিয়ায় জমানো কীটপতঙ্গ ও ব্যাক্টেরিয়া মুরগীর আমিষ ও ভিটামিনের যোগান দেয়। ঠোঁট আঁচড়ে মুরগী গাজালো লিটার খেয়ে থাকে এবং গাজানো প্রক্রিয়ায় তাপ সৃষ্টি হওয়াতে লিটার শুকিয়ে যায়।
৬৪. ডিপ লিটার পদ্ধতিতে প্রতি মুরগীর জন্য কতটুকু জায়গা লাগে?
• প্রতি মুরগীর জন্য ২ বর্গফুট বা ০.১৮ বর্গ মিটার জায়গা লাগে।
৬৫. খোলা আলো-বাতাসের জন্য বহুতলাবিশিষ্ট তাকে কিভাবে মুরগী পালা যায়?
• হার্ডবোর্ড দ্বারা লিটার ধরে রাখার জন্য এক তাক থেকে অপর তাক ২ ফুট উঁচুতে তৈরি করে লিটারে মুরগী পালা যেতে পারে।
৬৬. কোন বয়সে ডিমপাড়া মুরগী খাঁচাতে উঠাতে হয়?
• ডিমপাড়া মুরগী ১৬-১৮ সপ্তাহ বয়সে খাঁচাতে উঠাতে হয়। বর্তমানে খাঁচা পদ্ধতি বেশ জনপ্রিয়।
৬৭. খাঁচা পদ্ধতির সুবিধা ও অসুবিধাসমূহ কি কি?
• খাঁচা পদ্ধতির সুবিধা হচেছ এতে পরিচর্যা সহজ, সুস্থতা-অসুস্থতা, অনুৎপাদনশীলতা সহজে বুঝা যায়, ডিম সংগ্রহ সহজ, ডিম পরিষ্কার থাকে, খাদ্য কম লাগে, কম জায়গায় বেশি মুরগী পালা যায়, মজুরী খরচ কম। খাঁচা পদ্ধতির অসুবিধা হচেছ এতে পায়খানা পরিষ্কার করার সমস্যা, মাছির উপদ্রব বাড়ে, দূর্গন্ধ হয়, মাঝে মাঝে চুন ছিটাতে হয়, তারের ঘষায় পায়ে অসুবিধা হয়, পায়ে কড়া পড়ে এবং খাঁচা খরচ বেশি।
৬৮. প্রতি মুরগীর জন্য খাঁচাতে কতটুকু জায়গা লাগে?
• লাল জাতের মুরগীর জন্য খাঁচাতে ৩০×১৮×১৬ সে.মি. অর্থাৎ ৪৬৪ ব. সে.মি. বা ৭২ ব. ই.এবং সাদা মুরগীর জন্য ১২×১৬×১৪ সে.মি. বা ৬৪ ব.ই. বা ৪১৫ ব. সে.মি.জায়গার দরকার।
৬৯. খাঁচা কত তলাবিশিষ্ট হতে পারে?
• খাঁচা তিন তলাবিশিষ্ট হতে পারে। প্রতি তলার নিচে টিন বা প্লাষ্টিকের ট্রে রেখে বিষ্টা জমানো হয় এবং ২-৩ দিন পরপর বিষ্টা সরানো হয়।
৭০. বিষ্টা না সরালে কি হবে?
• মাছি বংশ বিস্তার করে এবং দূর্গন্ধ বেড়ে যায় ও তেলাপোকাসহ অন্যান্য কীটপতঙ্গ জন্মাতে পারে।
৭১. খাবার পাত্র ও পানির পাত্র কোন অবস্থায় লাগানো থাকে?
• পরিচর্যাকারীর চলার সুবিধার্থে খাঁচার সামনের দিকে অথবা পিছনের দিকে ঝুলানো অবস্থায় বসানো থাকে।
৭২. মুরগী কিভাবে পানি ও খাবার খায়?
• গ্রীলের ভিতর দিয়ে মাথা ঢুকিয়ে মুরগী খাবার ও পানি খায়।
৭৩. মাছির জন্ম এবং উপদ্রব বন্ধ করার জন্য কি করতে হবে?
• প্রতি সপ্তাহে ট্রের উপরে চুন ছিটাতে হবে এবংপর্যাপ্ত আলো-বাতাস চলাচলের ব্যবস্থা করতে হবে।
৭৪. জমানো পায়খানা ও উচ্ছিষ্ট খাবার কি কাজে লাগানো যেতে পারে?
• মুরগীর বিষ্টা ও উচ্ছিষ্ট খাবার ব্যবহার করে বায়োগ্যাস তৈরি করার পর জমিতে জৈব সার হিসাবে ব্যবহার করা যেতে পারে।
৭৫. খাঁচা পদ্ধতি কি এবং এ পদ্ধতিতে কিভাবে মুরগী পালা যায়?
• ঘরের ভিতরে বাঁশ বা কাঠের তৈরি খাঁচার (মেঝে থেকে প্রায় ৩ ফুট উপরে) উপরে মুরগী পালা হয়। এক্ষেত্রে খাঁচার দুই বাতার মাঝখানে এত চাপা খালি জায়গা থাকে যাতে মুরগীর পা ঢুকতে না পারে কিন্তু মুরগীর বিষ্টা নিচে পড়তে পারে। অন্যান্য সব ব্যবস্থাপনা অনেকটা লিটার পদ্ধতির মতই।
৭৬. খাঁচা পদ্ধতির সুবিধা কি কি?
• মুরগীর ঘর সহজে পরিষ্কার করা যায় এবং মুরগীর স্বাস্থ্য ভালো থাকে। খাঁচা লিটার পদ্ধতির অনুরূপ জায়গায় প্রতিটি মুরগী পালা যায়।
৭৭. খাঁচা-লিটার পদ্ধতিটি কি?
• এ পদ্ধতিতে ঘরের একটা অংশে খাঁচা তৈরি (১৮ ইঞ্চি উঁচুতে) থাকে, অন্য অংশে লিটার বিছানো থাকে। মুরগী ইচ্ছামত লিটারে চলাফেরা করতে পারে আর রাতে ঘুমাতে পারে। প্রতি মুরগীর জন্য জায়গা লাগে প্রায় ১.৬ বর্গফুট।
৭৮. এ পদ্ধতিতে বিশেষ কি সতর্কতা অবলম্বন করা দরকার?
• মুরগী যাতে খাঁচার নিচে না ঢুকতে পারে তার জন্য খাঁচা ও মেঝের মাঝখানে ফাঁকা স্থানে ডিম পাড়ার বাক্স দেয়া হয় আর বাকী অংশ বন্ধ করে রাখা হয়।
৭৯. খাঁচা-লিটার পদ্ধতির সুবিধা কি কি?/span>
• ঘর দুর্গন্ধ হয় না, ডিম উৎপাদনের হার বেশি, সহজে সামান্য পরিশ্রমে পরিষ্কার করা যায় এবং সহজে পরিচর্যা করা যায়।
৮০. কোন বয়সে খাঁচা লিটার পদ্ধতিতে মুরগি স্থানান্তর করা হয়?
• সাধারণত ১৭-১৮ সপ্তাহ বয়সে স্থানান্তর করা হয়।
৮১. অন্যান্য ব্যবস্থাপনা কি কি হতে পারে?
• সুষম খাদ্য, পানি আলো ও বাতাস সরবরাহ, টিকা প্রদান, জীবনিরাপত্তা ও সংশ্লিষ্ট ব্যবস্থা প্রায় অন্যান্য পদ্ধতিরই অনুরূপ।
৮২. কত বয়সে ডিমপাড়া মুরগী লাভজনকভাবে ডিম দেয়?
• ২১-৭৫ সপ্তাহ এবং এর জন্য ডিম উৎপাদনের সাথে প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে জড়িত বিষয়ে ব্যবস্থা নেয়া দরকার।
৮৩. প্রতিটি লেয়ার বাড়ন্ত মুরগীকে প্রতিদিন কতটুকু খাবার দিতে হবে?
• ৯০-১১০ গ্রাম, সুষম খাদ্য তৈরির ক্ষেত্রে পরিমিত মাত্রায় ভিটা মিনারেল প্রিমিক্স ও এ্যামাইনো এসিড মিশাতে হবে।
৮৪. প্রতিটি লেয়ার মুরগীর জন্য প্রতিদিন কতটুকু খাবার সরবরাহ করতে হবে?
• ১০০-১১৫ গ্রাম।
৮৫. বয়সানুসারে লেয়ার মুরগীর খাদ্য গ্রহণের মোট পরিমাণ কত?
• চিক জন্ম থেকে ৮ সপ্তাহ = ১.৭৫ কেজি,
গ্রোয়ার ৯ থেকে ২০ সপ্তাহ = ৬ কেজি,
লেয়ার ২১ থেকে ৭২ সপ্তাহ = ৪০ কেজি ।
৮৬. লেয়ার মুরগীর খাদ্যসামগ্রীর হঠাৎ পরিবর্তন ঘটলে কি হবে?
• মুরগীর মুখের রুচির পরিবর্তন হবে, খাদ্য গ্রহণের পরিমাণ কমবে, পুষ্টি গ্রহণ কমে যাবে। ফলে ডিম উৎপাদন কমবে, ডিমের গুণ কমে যাবে এবং কোন কোন ক্ষেত্রে ডিম উৎপাদন বন্ধ হতে পারে।
৮৭. লেয়ার মুরগীর খাদ্যে বিষক্রিয়া দেখা দেয় কখন?
• অতিমাত্রায় অপ্রচলিত সামগ্রী বাড়ালে, খাদ্য সামগ্রী বা খাদ্যে স্যাঁতস্যাঁতেভাবে আফলা টক্সিন (ছত্রাক) জন্মালে, নিম্ন কিংবা অতি উচ্চ তাপমাত্রায় খাদ্যসামগ্রী সংরক্ষণ করলে।
৮৮. রূপালী মুরগী বলতে কোন মুরগীকে বুঝায়?
• হোয়াইট লেগ হর্ন ও ফাইউমি জাতের মুরগির মধ্যে শংকরায়ণে রূপালী জাতের মুরগী সৃষ্টি হয়।
৮৯. পুরাতনের মধ্যে কোন কোন জাতের মুরগী বেশি ডিম দেয়?
• হোয়াইট লেগ হর্ন ও রোড আইল্যান্ড রেড বছরে প্রায় ৩০০ ডিম দেয়।
৯০. উন্নত জাতের মুরগির প্রতিটি ডিমের ওজন কত গ্রাম হয়?
• ৬০-৬৫ গ্রাম।
৯১. বর্তমানে সাধারণত কোন পদ্ধতিতে ডিম উৎপাদনকারী মুরগী পালন করা হয়?
• লিটার এবং খাঁচায়।
৯২. ডিমপাড়া মুরগীর খাদ্যে কি পরিমাণ আমিষ এবং বিপাকীয় শক্তি থাকা দরকার?
• ১৬-১৭% আমিষ এবং প্রতি কেজিতে ২১০০-৩০০০ কিলোক্যালরি বিপাকীয় শক্তি থাকতে হবে।
৯৩. পুষ্টিমাত্রা অস্বাভাবিকভাবে বাড়ালে কি হবে?
• খাদ্য গ্রহণ কমবে এবং পানি গ্রহণ বাড়বে ও পুষ্টিহীনতা দেখা দেবে।
৯৪. লেয়ার খাদ্যে দানাদার সামগ্রীর মাত্রা কতটুকু হওয়া ভালো?
• ৫০-৫৫% (গম/ভূট্টা) শক্তির পরিমাণ মেটানোর জন্য।
৯৫. লেয়ার খামার থেকে লাভবান হওয়ার জন্য খামার শুরুর সর্ব প্রথম কি করতে হবে?
• সুষ্টু পরিকল্পনাসহ যথার্থ মূলধন সংগ্রহ করত হবে। পোল্ট্রি পালনের সম্যক ধারণা রাখতে হবে।
৯৬. যথাযথ খামার স্থাপনের স্থান কোথায় হতে পারে?
• নিষ্কাশন ব্যবস্থাসহ উঁচু জায়গায় বসত-বাড়ি ও অন্যান্য খামার থেকে দূরে হতে হবে। প্রধান সড়ক থেকে দূরে কোলাহলমুক্ত এলাকায় যোগাযোগ ও বিদ্যুতের সুব্যবস্থা থাকতে হবে। স্থানীয় বাজারে ডিম, মুরগী বিক্রিসহ সুলভমূল্যে সুষম খাদ্য প্রাপ্তির ব্যবস্থা থাকতে হবে।
৯৭. বর্তমানে অধিক ডিমপ্রদানকারী মুরগীর জাতগুলির নাম কি কি?
• হাই সেক্স সাদা/বাদামী, স্টারক্রস ব্রাউন, লোহমেন ব্রাউন, ইসা ব্রাউন, হাইলাইন ব্রাউন, বিভি-৩০০, ব্রাউনিক, নিকচিক, বোবেলস্ ব্রাউন, হাবার্ড হোয়াইট, ব্যবলোনটেট্রা, স্টারক্রস লেয়ার-৫৬৬, শেভার ব্রাউন, শেভার হোয়াইট, শেভার-৫৬৬, ৫৭৯ ও ২০০০, সোনালী ও রূপালী।
৯৮. বর্তমানে কোন সংস্থা, প্রতিষ্ঠান ও হ্যাচারীতে উন্নতজাতের বাচ্চা পাওয়া যায়?
• এগস্ এন্ড হেনস্ লিঃ, জয়দেবপুর; কাজী হ্যাচারী লিঃ, গাজীপুর; বিমান পোল্ট্রি কমপ্লেক্স, সাভার; কেন্দ্রিয় হাঁসমুরগীর খামার, মিরপুর. ঢাকা; ফিনিক্স পোল্ট্রি লিঃ, সাভার; আফতাব বহুমুখী ফার্ম, কাকরাইল, ঢাকা; উষা পোল্ট্রি লিঃ, সাভার; ইউনাইটেড ফুড কমপ্লেক্স লিঃ, সাভার; সিলভারকার্প, ঢাকা; কাজী ফার্ম, ঢাকা; ঢাকা হ্যাচারী লিঃ, ঢাকা। এ ছাড়া আরও কিছু ফার্ম বর্তমানে বাচ্চা উৎপাদন ও সরবরাহ করে থাকে।
৯৯. লেয়ার খামার ব্যবস্থাপনায় কি কি বিষয়ে গুরুত্ব দিতে হবে?
• বাসস্থান, মুরগী প্রতি জায়গা, লিটার, ঘরের আলো-বাতাস, জীবনিরাপত্তা, খাদ্য, তাপমাত্রা, খাদ্য ও পানির পাত্র, খাদ্য ও খাওয়ানোর পদ্ধতি, আলো রক্ষণাবেক্ষণ, ঠোঁট-কাটা, ছাটাই-বাছাই, স্বাস্থ্য-পরিচর্যা ও খামারের আয়-ব্যয়ের হিসাব ইত্যাদি বিষয়ে গুরুত্ব আরোপ করতে হবে।
১০০. লেয়ার ঘরের বিছানা কতটুকু পুরু হওয়া দরকার?
• ১৫-২০ সে.মি. পুরু হতে হবে।
১০১. কোন সময়ে ঘরে ডিমপাড়ার বাক্স দিতে হবে? • ডিম-পাড়া আরম্ভ করার সাথে সাথেই।
১০২. লিটার সপ্তাহে কতবার উল্টাতে হবে?
• সপ্তাহে দু’বার এবং সময়মত চুন দিতে হবে।
১০৩. ডিমপ্রদানকারী মুরগীর জন্য প্রতিদিন কতক্ষণ আলো থাকা দরকার?
• প্রায় ১৬ ঘন্টা, দিনের সময় বাড়তি থাকলে ২-৩ ঘন্টা সূর্যের আলো থেকে আলো পেয়ে থাকে।
১০৪. আলো নিয়ন্ত্রণের প্রয়োজন কি?
• মুরগীর যৌন পরিপক্কতা, হরমোন ক্ষরণ ও খাবার গ্রহণের জন্য।
১০৫. বছরের সব ঋতুতে একই মাত্রায় কি আলোর দরকার হয়?
• দিনের দৈর্ঘের উপর নির্ভরশীল, শীতের মৌসুমে আলোর দীর্ঘতা বাড়াতে হয়।
১০৬. বয়সভেদে কতক্ষণ আলো রাখা দরকার?
• ১৯-২০ সপ্তাহে ১২ ঘন্টা, প্রতি সপ্তাহে আধা ঘন্টা হিসাবে বাড়িয়ে ২৮-৭২ সপ্তাহে প্রতিদিন ১৬ ঘন্টা আলো রাখা দরকার।
১০৭. কি কি উদ্দেশ্যে আলো নিয়ন্ত্রণ করা হয়?
• ঠিক বয়সে ঠিক ওজনে ঠিক আকারের অধিক ডিম উৎপাদনের উদ্দেশ্যে আলো নিয়ন্ত্রণ করা হয়।
১০৮. কি ধরনের বাল্ব দিতে হবে?
• একটি ৬০ ওয়াটের বাল্ব ১২০ বর্গফুট জায়গার আলো দেয়ার জন্য, এক বাল্ব থেকে আরেক বাল্ব পর্যন্ত ১০ ফুট দূরত্বে ৭-৮ ফুট উঁচুতে রাখতে হবে। টিউব বাল্ব ব্যবহার করা ভালো। হ্যাচারীর নির্দেশ পালন করা উত্তম।
১০৯. বয়সভেদে আলোর প্রখরতা কি রকম হতে পারে?
• ব্রুডিং অবস্থায় ২০-৩০ লাক্স, বাড়ন্ত অবস্থায় ১০-২০ লাক্স এবং ডিমপাড়া অবস্থায় ২০-৩০ লাক্স।
১১০. লাক্স হিসাবে কত ওয়াটের, কয়টি বাল্ব, কতটুকু জায়গায় আলো দিতে পারবে?
• ১০ লাক্স-১ ওয়াট ১বর্গফুট, ২০ লাক্স-১ওয়াট ২ বর্গফুট, ডিমপাড়ার সময় ১ ওয়াট ১.৫ বর্গফুট জায়গায় আলো দেবে।
১১১. লেয়ার মুরগীর কোন বয়সে আলোর সময় বাড়ানো কমানোর নিয়ম কি কি?
• প্রথম সপ্তাহে ২২ ঘন্টা, পরের প্রতি সপ্তাহে ২ ঘন্টা হিসাবে কমিয়ে ২০ সপ্তাহ ১২ ঘন্টা, আবার ২১ সপ্তাহ থেকে আধা ঘন্টা হিসাবে বাড়িয়ে ২৮ সপ্তাহ পর্যন্ত ১৬ ঘন্টা রাখতে হবে এবং ১৬ ঘন্টা হিসাবে দিনের দৈর্ঘের হ্রাস-বৃদ্ধি বিবেচনায় বাড়াতে বা কমাতে হবে।
১১২. লেয়ারকে কতদিন পর্যন্ত ভ্যাকসিন দিতে হয়?
• প্রথম সপ্তাহ থেকে ৪০ সপ্তাহ পর্যন্ত নিয়মমাফিক সবগুলো ভ্যাকসিন এবং এদের বোষ্টার ডোজ দিতে হবে।
১১৩. ডিবিকিং বলতে কি বুঝায়?
• ডিবিকিং বলতে বাংলায় বুঝায় মুরগীর ঠোঁট কাটা, কোন একটি নির্দিষ্ট বয়সে বা প্রয়োজনে মুরগীর ঠোঁটের একটা সুনির্দিষ্ট অংশ কেটে বাদ দেয়া হয়।
১১৪. লেয়ার পালনের কোন কোন পদ্ধতিতে ক্ষেত্রে ডিবিকিং করা হয়?
• খাঁচা এবং লিটার দুই পদ্ধতিতেই লেয়ার পালনের ক্ষেত্রে ডিবিকিং করা হয় যদি ঠোঁকাঠুকির বদ অভ্যাস লক্ষ্য করা যায়। ঠোঁকাঠুকির এমন ক্ষতিকর বদ অভ্যাস নিরসনের জন্য ডিবিকিং করা হয়।
১১৫. ডিবিকিং কেন করা হয়?
• মারাত্মক ক্ষতিকর ঠোঁকরাঠুকরির প্রবণতা বা অভ্যাস বন্ধ করা যাতে এ খারাপ অভ্যাসটি একটি দুটি মোরগ-মুরগী থেকে খামারের অন্যান্য মোরগ-মুরগীতে ছড়িয়ে না পড়ে, ছড়িয়ে-ছিটিয়ে-পড়া খাদ্যের অপচয় রোধ করা যাতে এরা শুধুমাত্র দানাদার খাদ্য খেতে না পারে, স্বভাব শান্ত করা, ডিম প্রদানে মনোযোগী করা, শরীরের শক্তির অপচয় রোধ করা এবং ডিম-ভাঙ্গা বন্ধ করা।
১১৬. কোন কোন সময়ে ডিবিকিং করা আবশ্যক?
• ৬-১০ দিন, ১২-১৬ সপ্তাহ এবং ব্রয়লারের ক্ষেত্রে প্রয়োজনবোধে ২-৩ সপ্তাহে ডিবিকিং করা আবশ্যক তবে ডিমপাড়া অবস্থায় ডিবিকিং করা যাবে না।
১১৭. বয়স অনুসারে কিভাবে ডিবিকিং করা হয়?
• মুরগীর ৬-১০ দিন বয়সে ৮১৫ ডিগ্রি সে. তাপে মাত্র ৩ সেকেন্ডে ডিবিকিং মেশিনে নাকের ছিদ্র থেকে ২ মি. মি. দূরে ঠোঁট কাটা হয়। বেশি সময়ে ঠোঁট পুড়ে যায় এবং পুণরায় দ্রুত ঠোঁট বাড়ার/রূপান্তরের সুযোগ থাকে। ১২ থেকে ১৬ সপ্তাহ বয়সে পুলেটের নাকের ছিদ্র থেকে ৬-৭ মি.মি. দূরে ৯২৬ ডিগ্রি সে. তাপে মেশিনে ব্লেডে কাটতে হয়।
১১৮. ঠোঁট কাটার পর মুরগীর খাদ্য খেতে কোন অসুবিধা হয় কি?
• খাদ্যপাত্রের গভীরতার প্রায় ২/৩ অংশ সব সময় খাদ্যে ভরা রাখতে হয় যাতে কাটা-ঠোঁটে কোন আঘাত না লাগে।
১১৯. ছোট খামারে (১০০-২০০ মুরগীর) প্রচলিত পদ্ধতিতে কিভাবে ঠোঁট কাটা হয়?
• বাজারেপ্রাপ্ত অস্ত্র বা ব্লেড দ্বারা খামারীগণ নিজেরাই মুরগীর ঠোঁটের আকার অবস্থা ও বয়সানুসারে কাটতে পারে।
১২০. ঠোঁট কাটার ক্ষেত্রে কি কি সতর্কতা অবলম্বন করতে হবে?
• ভালো ও সঠিক ধারালো ব্লেডে দক্ষ ব্যক্তির দ্বারা ঠোঁট কাটাতে হবে, রক্তপাত এড়াতে হবে, রক্তপাত হলে তাড়াতাড়ি বন্ধ করতে হবে, সুস্থ ও সবল বাচ্চা ও বয়স্ক মুরগীর ঠোঁট কাটতে হবে, ঠোঁট কাটার ১ দিন আগে থেকে প্রতি লিটার পানিতে ৪ মিলিগ্রাম ভিটামিন ‘কে’ একটানা পাঁচ দিন খাওয়াতে হবে, অসুস্থ বা টিকাদানকৃত মুরগীর ডিবিকিং করা যাবে না, কাটা অংশ মসৃণ হতে হবে, ভালভাবে কটারাইজ করতে হবে, ঠোঁটের নিচের অংশ কিছুটা বড় থাকবে। ডিবিকিং সঠিক না হলে মুরগীর ডিম উৎপাদন কমে যাবে। তাই সে বিষয়ে সতর্ক থাকতে হবে।
১২১. ডিবিকিং-এর পরবর্তীতে কি কি করতে হবে?
• পরবর্তী ২-৩ দিনে ভিটামিন ‘কে’ খাওয়াতে হবে, খালি ভিটামিন-মিশ্রিত খাবার পানি খাওয়াতে হবে এবং আরামদায়ক বাসস্থানে রাখতে হবে, পর্যাপ্ত পানি ও খাবার খাওয়াতে হবে ও মুরগী স্থানান্তর করা যাবে না।
১২২. মুরগীর ধকল বলতে কি বুঝায়?
• যে কারণে মোরগ-মুরগীর স্বাভাবিক জীবনযাত্রা, দৈহিক বৃদ্ধি, আরাম ও উৎপাদন ক্ষমতা অস্বাভাবিক বা কোনভাবে বিঘ্নিত হয় তাকে ধকল বা স্ট্রোক বলে।
১২৩. মুরগীর ধকলের বিযয়সমূহ কি হতে পারে?
• যে কারণে ধকল হয়: বিভিন্ন সময়ে অবস্থান পরিবর্তন, অতি গরম বা ঠান্ডা আবহাওয়া, অপরিমিত ব্রুডিং তাপমাত্রা, সরাসরি গরম বা ঠান্ডা বাতাস, বাসস্থানের অপরিমিত জায়গা, টিকা প্রদান পরবর্তী সময়ে অস্বাভাবিক শব্দ, অচেনা লোক, অপুষ্টি, বিঘ্নিত পানি সরবরাহ/পানি স্বল্পতা, ডিবিকিং, কৃমির উপদ্রব, অস্বাভাবিক দৈহিকবৃদ্ধি, উচ্চহারে ডিম প্রদান, রোগাক্রান্ত অবস্থার অবসান এবং আরও অনেক অজানা অচেনা কারণ থাকতে পারে।
১২৪. ধকলের ফলাফল কি কি হতে পারে?
• খাদ্য গ্রহণে অনীহা, দেহ অবসাদগ্রস্থ, দৈহিক ওজন ও উৎপাদন হ্রাস এবং কোন কোন ক্ষেত্রে মৃত্যুও হতে পারে।
১২৫. ধকল প্রতিকার বা প্রশমনে কি কি করণীয় থাকতে পারে?
• ধকলের প্রকৃত বা সম্ভাব্য কারণ সনাক্ত করে প্রতি ধকলের বিপরীতে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে। কোন কোন ধকল থেকে মুরগী নিজেই কাটিয়ে উঠতে পারে, কোন কোন ক্ষেত্রে সঠিক চিকিৎসা/ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হয়, অতি গরমে বাসস্থানের ভিতরের তাপমাত্রা কমানোর ব্যবস্থা করতে হয়, সকাল এবং বিকালে খাদ্য সরবরাহ করতে হয়, অতি গরমে পানিতে বরফ বা ইলেকট্রোলাইট এবং পানিতে ভিটামিন মিশিয়ে খাওয়াতে হবে।
১২৬. তাপজনিত ধকলের উৎস কি কি হতে পারে?
• সূর্যের রশ্মি আর ঘরের ভিতরে মুরগীর শরীরের তাপমাত্রা তাপজনিত ধকলের উৎস হতে পারে।
১২৭. ঘরের তাপমাত্রা বেড়ে গেলে মুরগীর কি হয়?
• মুরগীর শরীরে ঘর্মগ্রন্থি নেই বিধায় নিজের শরীরের তাপমাত্রা নিয়ন্ত্রণের জন্য মুরগী হাঁপায়।
১২৮. ধকলের অধিক গরমে কি কি ক্ষতি হয়?
• পানি বেশি খায়, খাবার কম খায়, ডিম উৎপাদন কমে, ব্রয়লারের ওজন বাড়ে এবং অনেক ক্ষেত্রে মুরগী মারাও যায়।
১২৯. মুরগীর ঘরের আরামদায়ক ও ক্ষতিকর তাপমাত্রা কতটুকু?
• ১৫-২৬ ডিগ্রি সে. আরামদায়ক, ২৭-৩০ ডিগ্রি সে. শেষ পর্যায়ে সহনীয়, ৩১-৩৫ ডিগ্রি সে. অসহনীয়, এক্ষেত্রে মুরগী খাবার কম খায়, পানি গ্রহণ বাড়ে, ডিমের আকার ছোট হয়, খোসা পাতলা হয়, সামান্য হাঁপাতে থাকে, পাতলা পায়খানা হয়। ৩৬-৪০ ডিগ্রি সে. ডানা ঝুলে পড়ে, হাঁপাতে থাকে, দেহে অবসন্নতা আসে, দৈহিক ওজন ও ডিম উৎপাদন উভয়ই কমে, ৪১ ডিগ্রি সে.-এর উপরে মৃত্যুর হার বেড়ে যায়।
১৩০. অধিক গরমে কি কি রোগ হতে পারে?
• কলিবেসিলাসিস, ককসিডিওসিস, মাইকোপ্লাসমোসিস, সালমোনেলোসিস, কলেরা, গামবোরো ইত্যাদি রোগ হতে পারে। খাদ্যে ছত্রাক জন্মাতে পারে যে কারণে ছত্রাক-বিরোধী বা ধ্বংসকারী এডিটিভ খাবারে মেশানো হবে।
১৩১. তাপজনিত ধকল থেকে মুরগীকে কিভাবে রক্ষা করা যেতে পারে?
• ঘর ঠান্ডা রাখার ব্যবস্থা রাখতে হবে, ঠান্ডা করার জন্য চালার নিচে সিলিং ও উপরে পানির স্প্রে বা ভেজা ছালা দিতে হবে, মুক্ত বাতাস চলাচলের ব্যবস্থা রাখতে হবে, ঘরের পাশে ছায়ার জন্য বড় গাছ লাগাতে হবে, অতি তাপে অতি কম আর্দ্রতায় ঘন কুয়াশার ন্যায় পানি স্প্রে করতে হবে, বিশুদ্ধ ঠান্ডা পানি বরফসহ দিতে হবে, ভিটামিনযুক্ত ইলেকট্রলাইট দিতে হবে, দিনের ঠান্ডা সময়ে খাবার দিতে হবে, অধিক তাপমাত্রায় শুধু পানি দিতে হবে, খাদ্যে সুষম অবস্থায় আমিষের মাত্রা না বাড়িয়ে এ্যামাইনো এসিডের (মিথিওনিন ও লাইসিন) মাত্রা বাড়াতে হবে, খাদ্যের শক্তি না কমিয়ে (২৫০০-২৭০০ কিলোক্যালোরি/দিন) ফ্যাট ও ক্যালোরিসহ অন্যান্য খনিজ পুষ্টি বাড়াতে হবে, প্রতি কেজি খাবারে ১.৫ গ্রাম ভিটামিন ‘সি’ ও ভিটামিন ‘ই’ মেশাতে হবে, পেলেট খাদ্য দিতে হবে এবং খাবার ও পানির পাত্রের সংখ্যা বাড়াতে হবে।
১৩২. বর্ষাকালে লেয়ার খামার ব্যবস্থাপনায় কি কি করতে হবে?
• কোন অবস্থাতেই পানিতে ভিজে ঘরের মেঝে বা লিটার যেন স্যাঁতস্যাঁতে না হতে পারে সেদিকে লক্ষ্য রাখতে হবে, প্রতি ১০০ বর্গফুট মেঝে/লিটারের জন্য ১-২ কেজি চুন ছিটাতে হবে, আঁচড় দিয়ে প্রতিদিন লিটার ওলোট পালট করতে হবে।
১৩৩. বর্ষাকালে খাদ্য ব্যবস্থাপনা কি রকম হওয়া উচিৎ?
• বর্ষার আগে খাদ্য সামগ্রী/খাদ্য সংগ্রহ করতে হবে, খাদ্যের বস্তা মেঝে থেকে উপরে কাঠের মাচায় দেয়াল থেকে ১ ফুট দূরে রাখতে হবে, খাদ্যের জলীয় অংশ ১২% এর মধ্যে বা নিচে রাখার ব্যবস্থা করতে হবে, ছত্রাক-ধ্বংসকারী এডিটিভ খাদ্যে মিশাতে হবে, দুষ্প্রাপ্য খাদ্যসামগ্রী (ঝিনুক, মাছের গুঁড়া) কিনে রাখতে হবে । টিউব বাল্ব ব্যবহার করা ভালো। হ্যাচারীর নির্দেশ পালন করা উত্তম।
১৩৪. বর্ষাকালে পানি দূষণ বন্ধে কি করতে হবে?
• পানি সরবরাহের ৩ ঘন্টা আগে প্রতি ১০০০ লিটার পানিতে ২.৩ গ্রাম উন্নতমানের ব্লিচিং পাউডার মিশালে ভালো ফল পাওয়া যাবে।
১৩৫. ঘরের চারপাশ কি রকম রাখতে হবে?
• চারপাশের ঝোপজঙ্গঁল পরিষ্কার রাখতে হবে, সম্ভব হলে ঘরের চারপাশে কমপক্ষে ৩ ফুট পাকা এ্যাপ্রোন নির্মান করলে অতি তাড়াতাড়ি পানি নিষ্কাশন সহজ হবে।
১৩৬. শীতকালে কি পরিমাণ তাপ মুরগির জন্য ধকল হতে পারে এবং তখন কি হয়?
• তাপমাত্রা ৪-৫ ডিগ্রি সে. নামলে ধকল দেখা দেয়, দেহের তাপমাত্রা বাড়াতে খাদ্য গ্রহণ মাত্রা বাড়াতে হয়, ডিম উৎপাদন বিশেষভাবে ক্ষতিগ্রস্থ হয়, কোন কোন সময় মুরগী মারা যায়।
১৩৭. শীতের ধকল এড়ানোর জন্য মুরগীর ঘরে কি করণীয়?
• ঘরের চারধারে বেড়ার সাথে আটাআটি করে পর্দা দিতে হবে যা প্রয়োজনে আলোর জন্য উঠানো নামানো যায়। যেকোন উৎস থেকে তাপ সরবরাহ করে ঘর গরম করতে হবে, একজষ্ট ফ্যানের সাহায্যে এমোনিয়া গ্যাস নিবারন করতে হবে, খাদ্যের শক্তির মাত্রা বাড়াতে হবে এবং হালকা গরম পানি সরবরাহ করতে হবে ।
১৩৮. শীতকালে আর্দ্রতা কমলে কি হয়?
• ঘরের ভিতরে ধূলাবালি বেড়ে যায়, খাদ্য ও পানির সাথে ধূলাবালি মিশে ছড়িয়ে মুরগীর সাধারণ স্বাস্থ্য রক্ষায় বিঘ্ন সৃষ্টি করে, ফুসফুসের কার্যকারীতায় বাধা দেয়, নানা রকম রোগের প্রাদুর্ভাব দেখা দেয় ও ঘরের পরিচ্ছন্নতা নষ্ট হয়।
১৩৯. শীতে ধূলাবালি থেকে কিভাবে মুরগীকে নিরাপদে রাখা যায়?
• উন্নত লিটার বিছায়ে ঘরের আর্দ্রতা ১৫%-এর নিচে না নামে সে ব্যবস্থা করতে হবে, প্রতি লিটার পানিতে চার গ্রাম ভারকন বা এক গ্রাম টিমসেন মিশিয়ে ঘরের ভিতর স্প্রে করতে হবে।
১৪০. ছাঁটাই বাছাই বলতে কি বুঝায়?
• ডিম উৎপাদন বা দৈহিক বৃদ্ধি আশানুরূপ না হলে বিশেষ কতগুলো বিযয় বিবেচনা করে মুরগী বাছাই ও আলাদা করে বিক্রি বা ধ্বংস করার পদ্ধতিকে ছাটাই বলা হয়। বস্তা মেঝে থেকে উপরে কাঠের খাচায় দেয়াল থেকে ১ ফুট দূরে রাখতে হবে, খাদ্যের জলীয় অংশ ১২%-এর মধ্যে বা নিচে রাখার ব্যবস্থা করতে হবে। ছত্রাক-ধ্বংসকারী এডিটিভ খাদ্যে মেশাতে হবে, দুষ্প্রাপ্য সামগ্রী যেমন ঝিনুক, হারের গুঁড়া কিনে রাখতে হবে।
১৪১. কি কি কারণে মুরগী ছাঁটাই-বাছাই করা হয়?
• একই বয়সের স্বাস্থ্যসম্মত মুরগীর ঝাঁক তৈরি করা, ঘরের জায়গা প্রকৃতভাবে ব্যবহার করা, খাদ্য ও প্রোটিন ব্যয় এবং রোগ বিস্তার কমানো।
১৪২. খাদ্য ব্যয় কমাতে ছাঁটাই কিভাবে সহায়তা করে?
• দৈহিক বৃদ্ধি বা ডিম উৎপাদন কমে গেলে খাদ্য রূপান্তর ক্ষমতাও কমে যায়, এক্ষেত্রে মুরগি ছাঁটাই আবশ্যক।
১৪৩. ছাঁটাই করা মুরগী কি কাজে ব্যবহার করা হয়?
• সুস্থ্ মুরগী মাংস হিসেবে খাওয়া যায় আর অসুস্থ্ হলে ভালো উপায়ে নিধন করা হয়।
১৪৪. ছাঁটাই দ্বারা কিভাবে রোগ বিস্তার কমানো যায়?
• শারিরীক লক্ষণ দেখে সুস্থতা বা অসুস্থতা বুঝা যায়। তাই দূর্বল ও রোগাক্রান্ত মুরগী ছাঁটাই করে রোগ বিস্তার কমানো যায়, ছাটাইয়ের মাধ্যমে ঘর থেকে মুরগী অপসারণ করে বিছানা পরিবর্তন করলে জীবাণু ধ্বংস হয়।
১৪৫. ছাঁটাই দ্বারা একই আকারের মুরগীর ঝাঁক কিভাবে তৈরি করা যায়?
• গড় ওজনের চেয়ে কম, অতি অল্প ওজন, কম ডিম দেয়া এবং অসুস্থ ও শুকনা মুরগী আলাদা করলে প্রায় একই ওজনের (গড় ওজনের কাছাকাছি) ও আকৃতির মুরগীর ঝাঁক তৈরি করা যায়।
১৪৬. কোন কোন বিযয় বিবেচনায় রেখে ছাঁটাই করা হয়?